সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি করা কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহন গত শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে। আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অভিযোগ, নৌপথে কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনকালে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার লাখ টাকা আদায় করা হয়।
চাঁদাবাজির বন্ধের দাবিতে তারা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) স্মারকলিপি দিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তাহিরপুরের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা কয়লা দিয়ে দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয়। নৌপথে বড় বাল্কহেড ও স্টিলের নৌকা দিয়ে পাটলাই নদ দিয়ে পরিবহন করা হয়। নৌপথ ছাড়া এখান থেকে কয়লা পরিবহনের কোনো সুযোগ নেই। এ সুযোগে পাঁচ মাস ধরে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের পাটলাই নদের ডাম্পের বাজার ও শ্রীপুর বাজার এই দুই জায়গায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাস আদায় এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নামে প্রতিটি নৌযান থেকে টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা আদায়ের রসিদও অনেক সময় দেওয়া হয় না। একেকটি নৌকা থেকে খাস আদায়ের নামে ১০ থেকে ১৫ হাজার এবং বিআইডব্লিউটিএর নামে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে নৌকা আটকে রাখা হয়। মারধর করা হয় শ্রমিকদের।
আমদানিকারক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, উপজেলার পাটলাই নদ হয়ে এসব কয়লা নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এই নদের দুই জায়গায় কোনো ঘাট না থাকা সত্ত্বেও নৌযান থেকে টাকা আদায় করা হয়।
ব্যবসায়ী সিদ্দিক মিয়া, আবুল খয়ের, ফরিদ গাজী জানান, তাহিরপুরের তিনটি শুল্ক স্টেশনে প্রায় ৭০০ কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক আছেন। এখানে কাজ করে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। এই চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়ীরা তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন এলাকার শ্রমিকেরা।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন, এমনিতেই নানা কারণে আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বিপাকে আছেন। তার ওপর কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনে এই বাড়তি টাকা দেওয়া একটা বিরাট বোঝা। তারা এ যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। আজ মঙ্গলবার সব ব্যবসায়ীকে নিয়ে করণীয় নির্ধারণে বৈঠক ডেকেছেন। সেখানেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী বন্দর পরিবহন কর্মকর্তা সুব্রত রায় বলেন, এটাকে চাঁদাবাজি বলা যাবে না। তারা ঘাট ইজারা দিয়েছেন। সেখানে টোল আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। কেউ বাড়তি টোল আদায় করলে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, কয়লাবোঝাই নৌকা থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের একটা অভিযোগ আছে। তারাও খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রশাসন তহশিলদারের মাধ্যমে খাস আদায় করছে। বিআইডব্লিউটিএর বিষয়টিও তদারকির জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শেয়ার করুন