পরিষ্কার করা হয় না নালা-নর্দমা,মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী

সিলেট

বিভিন্ন মহল্লার সড়কের কাজ কিছুটা করে ফেলে রাখা হয়েছে। বর্ষার সময় যা পথচারীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

সিলেট নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাতালিয়া এলাকায় একটি পাকা নর্দমা থাকলেও সেটা পরিষ্কার করা হয় না। নিচে আবর্জনার আস্তর জমে গভীরতা কমেছে। বৃষ্টি হলে পানি নামতে না পেরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় যত্রতত্রভাবে। সড়কে বাতিও জ্বলে না ঠিকঠাক। এ ছাড়া দিনে ও রাতে সমানতালে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ থাকেন বাসিন্দারা।

এ রকম নানা ভোগান্তিতে দিন কাটছে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। গত মঙ্গল ও বুধবার কুয়ারপাড়, লালাদীঘির পাড়, মেডিকেল, মধুশহীদ, ভাতালিয়া রিকাবীবাজার, নয়াপাড়া এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভাতালিয়া এলাকায় চায়ের দোকান চালান সুজন চন্দ্র দাশ (৪৫)। তিনি বলেন, মশার কথা বলে লাভ নেই। দিন ও রাতে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এরপরও মশা কমে না। ভাতালিয়ায় একটি নর্দমা রয়েছে। নর্দমার নিচে ময়লা পড়ে গভীরতা কমে গেছে। এতে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হয়। গত বন্যায় এলাকায় কোথাও কোমরসমান এবং কোথাও হাঁটুসমান পানি ছিল।

লালাদীঘির পাড় এলাকার বিমল অধিকারী বলেন, লালাদীঘির পাড় থেকে মেডিকেলে যাতায়াতের সড়কটির নর্দমার সংস্কারকাজ করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু এখনো সে কাজ শেষ হয়নি। সড়কটিতে বৃষ্টি হলে যাতায়াত করা যায় না। অন্যদিকে কুয়ারপাড় হয়ে লালাদীঘির পাড় হয়ে আসা–যাওয়ার সড়কটি অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। এভাবে থাকলে সড়কটি বর্ষার সময় পথচারীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

ওয়ার্ডটির সাবেক কাউন্সিলর আবদুর রকিব বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর শিক্ষা ও সামাজিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন না। এলাকার বেশ কিছু এলাকা উন্নয়নকাজ থেকে বঞ্চিত। তিনি এবার প্রার্থী হয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে বঞ্চিত এলাকাগুলোতে উন্নয়নকাজের পাশাপাশি মসজিদে মসজিদে রমজান মাসে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থাসহ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও সংবর্ধনার ব্যবস্থা করবেন।

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা রকিবুল ইসলাম বলেন, এবার তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়া গেলে অসমাপ্ত কাজগুলো তিনি শেষ করবেন। ওয়ার্ডের মশকনিধন কার্যক্রম চলছে। গতকাল বুধবারও ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। সড়কবাতিগুলোর অধিকাংশ নষ্ট হওয়ায় পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বাতিগুলো পরিবর্তন করতে হলে সিটি করপোরেশনের গাড়ির প্রয়োজন হয়। মই ব্যবহার করে সড়কবাতি নাগালে না আসায় তাৎক্ষণিক পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।

নালা-নর্দমার আবর্জনা পরিষ্কার করা না হলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়বে এলাকাটি। গত বছরও সিলেটে যে সময় বন্যা দেখা দিয়েছিল, সে সময় এলাকায় কোমরসমান পানি ছিল।

এনামুল হক, বাসিন্দা, ভাঙ্গাটিকর, ১২ নম্বর ওয়ার্ড

রকিবুল ইসলাম আরও বলেন, সামাজিক কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের উৎসাহের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছেন। তবে করোনা এবং বন্যার জন্য গত দুই বছর কার্যক্রম কিছুটা স্থবির ছিল।

কিন্তু ওয়ার্ডে কোনো শিক্ষার্থী আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখায় সমস্যা হলে তিনি নিজ খরচে পড়াশোনার খরচ জোগানোর ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া সড়ক ও নালাগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

শেষ হচ্ছে না নালার নির্মাণকাজ

নগরের ভাঙ্গাটিকর এলাকায় একটি নর্দমা আবর্জনায় ভরা। পাশে সড়কের ওপরে কিছু আবর্জনা তুলে রাখা হয়েছে। সেগুলো দেখিয়ে গত বুধবার পথচারী এনামুল হক বলেন, নালা-নর্দমার আবর্জনা পরিষ্কার করা না হলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়বে এলাকাটি। গত বছরও সিলেটে যে সময় বন্যা দেখা দিয়েছিল, সে সময় এলাকায় কোমরসমান পানি ছিল।

ভাঙ্গাটিকর সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। কুয়ারপাড় দক্ষিণ, শেখঘাট, ভাঙ্গাটিকর, সওদাগরটুলা, ইটাখলা, শেখাঘাট কলোনি নিয়ে এ ওয়ার্ড। কুয়ারপাড় এলাকায় কিছু সড়কের কাজ এবং বক্স নর্দমার কাজ বাকি রয়েছে। অর্ধেক কাজ করা হলেও বাকিটা উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। ওয়ার্ডের শেখঘাট এলাকার কাজির বাজার ব্রিজের পশ্চিম পাশের সড়কটির ভাঙাচোরা। ভাঙ্গাটিকর এবং কুয়ারপাড় এলাকায় সড়কবাতিগুলো ঠিকমতো জ্বলে না।

কুয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা এ টি এম ইসরাত বলেন, তাঁদের বাড়ির পাশে নালার অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এতে হাঁটাচলার সময় আবর্জনার দুর্গন্ধ নাকে লাগে। এ ছাড়া বৃষ্টি হলে সড়কে ময়লা পানি উঠে যায়। এতে পানি মাড়িয়ে হাঁটাচলা করতে হয়।

১২ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদির বলেন, এলাকায় যুবসমাজের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিসহ তাঁদের নিয়ে ওয়ার্ডকে কীভাবে সুন্দর করা যায়, সেটির পরিকল্পনা নিয়েছেন। আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, মশকনিধন, নর্দমাগুলো সংস্কারও করবেন।

 

ওয়ার্ডটির চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে ভবিষ্যতে এলাকার যুবকদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। এ ছাড়া সেলাই প্রশিক্ষণের উদ্যোগও নেবেন। কুয়ারপাড় এলাকার নর্দমা এবং সড়ক সংস্কারকাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই স্থানে জায়গা নিয়ে কিছুটা ঝামেলা রয়েছে। সমস্যা মিটিয়ে দ্রুতই সেটি মেরামতকাজ হয়ে যাবে। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলতে ওয়ার্ডবাসীকে সচেতন করা হলেও তাঁরা কথা শুনছেন না। এতে আবর্জনা নালা-নর্দমায় জড়ো হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বারবার সেগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। আর সড়কবাতিগুলো সংস্কার করা হবে। মশকনিধনের ওষুধও ছিটানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *