
দেশজুড়ে আলোচনায় থাকা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথরে সেই পুরনো রূপে ফিরেছে। সাদাপাথর মাড়িয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ জলরাশি আর অদূরে সবুজ পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের পদভারে মুখর সাদাপাথর।
সাদাপাথর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাথর লুট পরবর্তী প্রশাসন আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারা প্রতিস্থাপিত সাদা পাথরের দৃশ্য। জিরো পয়েন্ট এলাকাজুড়ে প্রতিস্থাপন করা রাখা হয়েছে পাথর। ধলাইয়ের বয়ে চলা জলরাশির সাথে মেতে উঠেছেন বেড়াতে আসা শতাধিক পর্যটক দর্শনার্থী। প্রচন্ড গরমের মাঝে দেহ শীতল করতে ধলাইয়ের বুকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলরাশিতে গা ভিজিয়ে হইহুল্লোড় করছেন পর্যযটকরা। বৃহস্পতিবার সরেজমিন এমনটি দেখা গেছে। পর্যটকদের অনেকককেই দেখা গেলো ছবি তুলতে ব্যস্ত। ওপারে ভারতের পাহাড়ের সবুজের দিগন্তজোড়া এই নয়নাবিরাম দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করে নিচ্ছেন অনেকে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের সেখানে অবস্থান করছেন। সাদা পাথর প্রতিস্থাপন কার্যক্রম তদাবকির করছেন। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
জুবায়ের আহমদ নামের ঢাকার হাজারিবাগের পর্যটক জানান, সিলেটেতো বটেই সারা দেশের যে কটি পর্যটন স্পট আছে তার মধ্যে অন্যতম এই সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। দিনে রাতে স্থায়ী পুলিশ,বিজিবির টহল ও প্রশাসনের কঠোরতা নজরদারি বৃদ্ধি করে এ স্পটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও গতিশীল করতে হবে। এ স্পট রক্ষায় এলাকার সুশীল সমাজকেও নিতে হবে গুরুত্বপূর্ন ভ’মিকা।
কোম্পানিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল আলীম জানান, সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র সব সময় পর্যটক দর্শনার্থীদের প্রিয় স্থান। প্রতিদিন পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটক দর্শনার্থী। সম্প্রতি এখানকার পাথর লুটকান্ডের পর সরকার,প্রশাসন,পুলিশের তরফে কঠোর নজরদারীর পাশাপাশি জড়িতদের বিরোদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চিরচেনা সাদা পাথরে আস্তে আগের মতো বাড়ছে পর্যটক দর্শনাথী। সাদা পাথর রক্ষায় শুধু প্রশাসন,পুলিশই নয় আমাদের উপজেলাবাসীকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। কোম্পানিগঞ্জের থানা অফিসার ইনচার্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্জ রতন শেখ জানান,সিলেটের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এখানে মানুষ বেড়াতে আসে মনের ক্লান্তি দূর করতে। সুন্দর ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দিলে পর্যটক দর্শনার্থীদের ঢল নামবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান,সাদা পাথরে সৌন্দর্য্য রক্ষায় সরকারের গৃহিত উদ্যোগ আমরা বাস্তবায়ন করে চলেছি। ইতিপূর্বে লুন্ঠিত সাদা পাথর জব্দ করে এনে শ্রমিক লাগিয়ে দ্রুততায় পুনরায় সেখানে প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। নদীর তীরে জব্দ করে রাখা প্রায় ১৩ লক্ষ ঘনফুট পাথরও পর্যায়ক্রমে সেখানে প্রতিস্থাপন হবে। পর্যটক দর্শনার্থীদের প্রিয় সাদা পাথরকে অচিরেই আগের সেই রুপ লাবন্যতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সিলেটের জেলা প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে রয়েছে। যে কোন মূল্যে সাদা পাথর পর্যটন স্পট রক্ষা,পুনস্থাপনসহ ধলাই নদীর আশপাশে অবৈধভাবে পাথর বালি উত্তোলন বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, পাথরকান্ডের ঘটনায় বিএনপি’র বহিস্কৃত নেতা সাহাব উদ্দিনসহ অনেকেই এখন কারাগারে। পলাতক লাল মিয়াসহ লুটেরাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড়ের পর প্রশাসনে বড় ধরণের রদবদল হয়েছে। ইতোপূর্বে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদকে ওএসডি, কোম্পানিগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার ও বিতর্কিত ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানকেও বদলি করা হয়েছে। মোহাম্মদ রবিন মিয়াকে নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন সকরা হয়েছে। টুরিস্ট পুলিশ ইন্সপেক্টর রতন শেখকে আনা হয়েছে কোম্পানিগঞ্জের থানা অফিসার ইনচার্জ হিসেবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে দেশের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম যোগদান করেই লুট হওয়া পর্যটন স্পট পরিদর্শন করে নিয়েছেন কঠোর ব্যবস্থা। কোম্পানিগঞ্জ, ধোপাগুলসহ বিভিন্ন স্থান হতে প্রশাসন,আইনশৃংখরা বাহিনীর তরফে অভিযান পরিচালনা করে লুট হওয়া সাদা পাথর উদ্ধার হয় ব্যাপকহারে। উপজেলা প্রশাসন তরফে জানা গেছে প্রতিস্থাপন হওয়ার পরও এখনো ঘাটে রয়েছে জব্দ করা প্রায় ১৩ লাখ ঘনফুট পাথর।
শেয়ার করুন


