পর্যটন: সিলেটে অভাব পরিকল্পনার

সিলেট

আকাশের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারিসারি পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে আছে কোমল মেঘ। পাহাড়ের চূড়া থেকে এঁকেবেঁকে নেমে আসছে সফেদ ঝরনাধারা। নিচে পাথরের বিছানা বেয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ-শীতল জলরাশি। প্রকৃতির এমন অপূর্ব রূপ দেখা যায় কেবল সিলেটেই। তাই তো পর্যটন জেলা হিসেবে দেশ-বিদেশে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে এ অঞ্চলের। প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে রয়েছে পর্যটন বিকাশের অপার সম্ভাবনা। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কাজে আসছে না এ সম্ভাবনা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে বদলে দেওয়া যাবে এখানকার স্থানীয় অর্থনীতি। জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারে সিলেটের পর্যটনশিল্প। সিলেটের প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে- জাফলং, লালাখাল, শ্রীপুর, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও বিভিন্ন চা বাগান। এ ছাড়া বিভাগের মধ্যে শ্রীমঙ্গল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি, মাধবকুণ্ডু, হামহাম, হাকালুকি, টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রি লেক, বারেকের টিলা, শিমুলবাগানসহ অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি বছরই সিলেট বিভাগের নানা স্থানে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। এ ছাড়া হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের জন্য প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে সিলেটে।

কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ ধ্বংস ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় পর্যটনের এ অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। বেসরকারি খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও পর্যটন বিকাশে সরকারিভাবে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। জাফলংয়ের পিয়াইন নদে নামার সিঁড়ি নির্মাণ, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও জৈন্তাপুরের লালাখালে ওয়াসব্লক নির্মাণেই সীমাবদ্ধ সরকারি উদ্যোগ। পর্যটনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটের পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। পর্যটনশিল্পের বিকাশে প্যাকেজ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে উন্নয়ন করা গেলে সিলেট অঞ্চলে আরও কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। এজন্য যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোর আরও উন্নয়ন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত ওয়াসব্লক ও চ্যাঞ্জিং রুম স্থাপন, শহর থেকে দূরবর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় সরকারি উদ্যোগে হোটেল, রিসোর্ট ও উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট স্থাপন, পর্যটকদের জন্য বিআরটিসির মাধ্যমে ট্যুরিস্ট বাসের ব্যবস্থা করা, তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কুটিরশিল্প ও আদিবাসীদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসব সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে দেশের মধ্যে সিলেট হবে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্র, এমনটা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা আরও বলছেন, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পর্যটক সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের শিলং ও গৌহাটিতে বেড়াতে যান। অথচ সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে এসব পর্যটক ভারতে যাওয়া-আসার সময় সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোও ঘুরে দেখে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ ছাড়া ভারত থেকেও প্রচুরসংখ্যক বিদেশি পর্যটক সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসবেন।সিলেটের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটানো গেলে প্রচুর প্রবাসী বিনিয়োগ আসবে। সিলেটের প্রবাসীরাই এ খাতে বিনিয়োগ করবেন। বিভিন্ন সময় সিলেট চেম্বারের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রবাসীরা তাদের এমন আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন। সিলেটের পর্যটনশিল্পের উন্নতি হলে এখানকার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প নতুন প্রাণ পাবে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, ‘শুধু পর্যটন সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো গেলে সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে আর ভাবতে হবে না। স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র বদলে দিতে পারবে পর্যটন। জাতীয় জিডিপিতে ভূমিকা রাখবে এ খাত। এজন্য মাস্টারপ্ল্যান করে পয়েন্ট টু পয়েন্ট কাজ করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যটনবান্ধব পরিবেশ ও আইন প্রণয়ন করা গেলে সিলেটের পর্যটন জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *