পানির প্ল্যান্ট স্থাপন সম্পর্কে বিস্তারিত

জাতীয়

শেখ রাসেল
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর উদ্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে অলাভজনকভাবে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে “লবণাক্ত পানি শোধন (রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতি)” প্ল্যান্ট স্থাপন

ক. উদ্দেশ্য। পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ২০০-২৫০টি পরিবারকে গুচ্ছাকারে সংগঠিত করে ক্ষুদ্র আকারের রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতির ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করে উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকায় বসবাসরত কমিউনিটি পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্প মূল্যে সুপেয় পানি সরবরাহ করা। এই কার্যক্রমটি সম্পূর্ণ অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবনধারণের জন্য মৌলিক চাহিদা পুরণের একটি জনহিতৈষী উদ্যোগ। লবণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট টেকসইভাবে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে প্ল্যান্ট ব্যবহারকারী স্থানীয় জনগণের। পিকেএসএফ-এর পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী সংস্থা এ প্ল্যান্টের মালিকানা সংরক্ষণ করবে এবং সার্বিক তত্ত্বাবধান করার দায়িত্বে থাকবে।

খ. কোথায় স্থাপিত হয়: প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা হয়, যেমন- ভূপৃষ্ঠস্থ পানির সহজ লভ্যতা, সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, বিশুদ্ধ পানি পরিবহন অর্থাৎ যাতায়াত ব্যবস্থা, প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জমির সহজলভ্যতা ও উপযুক্ত অবস্থান, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে ‘পানি সংগঠন’ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী কিনা, চুক্তি পত্রের মাধ্যমে প্ল্যান্ট পরিচালনা কমিটির নামে জমি ব্যবহারের অনুমতি প্রদানে আগ্রহী কিনা, বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির চাহিদা, বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রবাহমান খাল অথবা নদীর অবস্থান নিকটবর্তী কিনা, সং এলাকার আশেপাশে বিদ্যমান সচল প্ল্যান্টের অবস্থান অর্থাৎ দূরত্ব, পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থার কর্মাপোকা ইত্যাদি।

গ. কিভাবে কাজ করে। প্রতিটি প্ল্যান্টের সেবা এলাকায় সকল সুফলভোগী সদস্য মিলে একটি পানি সংগঠন গঠ করতে হবে যা মূলত পানি সংগঠন নামে পরিচিত হবে। সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সময় প্রত্যেক সদস্যকে ২০০ (দুইশত) টাকা ফি দিয়ে ভর্তি হতে হবে। প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি আইডি কার্ড পানি সংগঠন তৈরি করে দিবে। লবণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্ল্যান্টের সুষ্ঠু পরিচালনা, নিরাপত্তা ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য পানি সংগঠন এর সদস্যদের মধ্যে থেকে ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট একটি প্ল্যান্ট পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। প্ল্যান্ট পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও দৈনন্দিন সুপেয় পানি উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থাপনায় একজন বেতনভুক্ত সার্বক্ষণিক অপারেটর-কাম-টেকনিশিয়ান নিয়োগ প্রদান করার মাধ্যমে এ কমিটি পরিচালিত হবে। তাঁর বেতন-ভাতা পানি বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে নির্বাহ করতে হবে। প্রতিদিন ২৫ লিটার পানি সরবরাহের শর্তে পরিবার প্রতি সপ্তাহে ১০ টাকা ফি ধার্য করা যেতে পারে অথবা লিটার প্রতি ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা যেতে পারে। সদস্যদের মধ্যে পানি সরবরাহের পর অতিরিক্ত উৎপাদিত সুপেয় পানির সর্বোচ্চ ৫০% অন্যান্যদের মধ্যে সাশ্রয়ীমূল্যে বিতরণ করা যেতে পারে। পানি বিক্রয় বাবদ প্রাপ্ত আয় যথাযথভাবে হিসাবভুক্ত করতে হবে। এছাড়া লবণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট পরিচালনা কমিটিকে বিভিন্ন ব্যাপারে সহায়তা প্রদান করার জন্য একজন পৃষ্ঠপোষক এবং তিনজন উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। পৃষ্ঠপোষক একজন পিকেএসএফ-এর সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংস্থার স্থানীয় শাখার কর্মকর্তা/ মনোনীত কর্মকর্ত এবং খ) উপদেষ্টা তিনজন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/ পৌর কাউন্সিলর, পানি সংগঠনের সভাপতি এর স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।

খ. প্ল্যান্ট-এর অপারেটর-কাম-টেকনিশিয়ান নিয়োগ এবং তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য। লবণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট প্রযুক্তি সুফলভোগীদের কাছে একেবারে নুতন বিষয় । তাছাড়া প্ল্যান্টটি একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এটির সঞ্চালনা ও পরিচালনা পদ্ধতি বন্ধ করতে কিছুটা সময় লাগবে। এ কারণে সুফলভোগীদের মধ্যে থেকে। এক বা একাধিক ব্যক্তিকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করতে হবে। তাছাড়া এটির পরিচালনা ও সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পানি সমিতির সদস্যনের মধ্য থেকে উপযুক্ত ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে অপারেটর-কাম-টেকনিশিয়ান হিসেম্বর নিয়োগ দিতে হবে তাঁর যোগ্যতা নুন্যতম ৮ম শ্রেণী পাশ। এ কাজে আগ্রহী এবং সৎ সবল দেহের অধিকারী, ষয়ে পিকেএম যোগ্য সংস্থার সাথে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। একজন অপারেটর-কাম-টেকনিশিয়ান এর দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে নিম্নরূপঃ

(১) পরিচালনা কমিটির নির্দেশনা অনুসারে তিনি প্রতিদিন সময়মতো ট্যাংকে পানি উঠাবেন এবং সুশৃঙ্খলভাবে সুফলভোগীদেরকে পানি বিতরণ নিশ্চিত করবেন। কোন পরিবার প্রতিদিন কি পরিমাণ পানি সংগ্রহ করলো তা রেজিস্টারে রেকর্ড করবেন এবং দিনশেষে (3)

বিতরণকৃত পানির মোট হিসাব সংরক্ষণ করবেন। (৩) লবণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট সার্বক্ষণিক পাহারা দিবেন। প্রয়োজনে, প্ল্যান্ট ঘরে অবস্থান করবেন এবং প্ল্যান্টের পাহারায় তৎপর থাকবেন।

(8) লবণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্ল্যান্টের নিয়মিত পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। (0) প্ল্যান্টের কোনো রকমের ক্ষতির ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ তা পরিচালনা কমিটিকে জানাবেন। (৬) পানি উত্তোলন বা সঞ্চালনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা পরিচালনা কমিটিকে অবহিত করবেন এবং আয়ত্তের মধ্যে হলে তা নিজে ঠিক করবেন।

(9) সদস্যদের নিকট থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে জমা দিবেন (৮) প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতির ঘরের সবকিছু তালাবদ্ধ অবস্থান নিজ দায়িত্বে রাখবেন।

ড. সাধারণ নির্দেশনাঃ লৰণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্যান্টের কার্যক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল এর সঠিক পরিচর্যা ও

রক্ষণাবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল। লবণমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট সুফলভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *