পার্বত্যচট্টগ্রামে ‘ট্রাসফোর্স’ কর্তৃক বাঙ্গালী অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের বাদ দেয়া হয়েছে!

জাতীয়

মো আরিফুল ইসলাম সিকদার,স্টাফ রিপোর্টার:

ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স হলো ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের একটা টাস্কফোর্স।

এই টাস্কফোর্স এর চেয়ারম্যান প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা। খাগড়াছড়ি জেলার এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা টাস্কফোর্স এর চেয়ারম্যান। কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) কর্তৃক সাক্ষরিত গত ১৪ জুলাই ২০১৯ এবং গত ২ আগস্ট ২০২২ খ্রিঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নিকট পাঠানো স্মারক মূলে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ উপজাতি শরনার্থীদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই এবং চুড়ান্ত তালিকা দাখিল করার জন্য পত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেয়। পত্রে শুধুমাত্র উপজাতি অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের কথা বলা হয়েছে। অথচ উপজাতিদের পাশাপাশি তৎকালীন পার্বত্য বাঙ্গালীরাও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ছিলো।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী- ১৯৯৩ সালে ভারত সরকার ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থীদের একটি তালিকা প্রদান করে।

১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে, পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিস্থিতির সময়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সহযোগিতার জন্য জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, শরণার্থী প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১০ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিতে টাস্কফোর্সকে অঙ্গীভূত করা হয়। ভারত সরকার ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশী শরণার্থীদের একটি হালনাগাদ তালিকাও এইসময় সরবরাহ করেছিল।

পার্বত্য চুক্তির পরে প্রশাসনের মাধ্যমে করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৯০,২০৮ জন ও ৩৮,১৫৬ জন বাঙালি অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু তালিকা ২০০০ সালের ১৫ মে টাস্কফোর্সে সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর বিতর্ক শুরু হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও শরণার্থী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিরা এ তালিকা নিয়ে আপত্তি করেন। তারা দাবি করেন, টাস্কফোর্সে শুধু প্রত্যাগত শরণার্থী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে।

২০০৯ সালের শেষের দিকে, টাস্কফোর্স রিপোর্ট করে যে ১২,২২৩টি পরিবার যাদের ৬৪,৬১২ জন সদস্য রয়েছে, তারা সংঘাত অবসানের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে এসেছে ও তাঁদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে।

ডিসেম্বর ২০১৬ সালে, টাস্কফোর্স ভারত থেকে ফিরে আসা অতিরিক্ত ২১,৯০০ শরণার্থী পরিবারকে চিহ্নিত করে।

সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে, টাস্কফোর্স ভারত থেকে ফিরে আসা ২১,৯০০ শরণার্থী পরিবারের এবং অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত ৮২,০০০ পরিবারের একটি তালিকা তৈরি করে। টাস্ক ফোর্স তালিকাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রেরণ করে যাতে সরকারের ব্যয়ে শরণার্থীদের পুনরায় বসতি স্থাপন করা যায়। টাস্কফোর্স অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ৩৮,০০০ অ–উপজাতিকে চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের জন্যও একটি প্রস্তাব রেখেছিল।

কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারপারসন, ২০১৮ তালিকাটি সঠিক নয় বলে সমালোচনা করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের এক বেনামি নিরাপত্তা কর্মী দাবি করেছেন যে তালিকায় ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে টাস্কফোর্স তাদের সাথে একত্রিত হয়েছে। টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা কেবল ২০০৯-এর তালিকাটিকে সঠিক বলে বর্ণনা করেছিলেন।

বিভিন্ন সময় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ তালিকায় উপজাতিদের পাশাপাশি পার্বত্য বাঙ্গালীরাও ছিলো। বর্তমানে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স কর্তৃক অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বাঙ্গালীদের তালিকা হতে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং পাঠানো স্মারক পত্রে বাঙ্গালীদের নাম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উপজাতিদের তালিকা দাখিল করার এবং শুধুমাত্র উপজাতিদের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য বাঙ্গালী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বাঙ্গালীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পার্বত্য বাঙ্গালীরা ১৯৯৭ সালের চুক্তির আগে বহুবার উপজাতি শান্তিবাহিনী নামক সন্ত্রাসীদের হামলায় এবং ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হয়।

সাম্প্রতিক সময়েই ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স হতে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু উপজাতীয় পরিবারের নামের তালিকা দাখিল বিষয়ের স্মারক পত্রটি বৈষম্যমূলক এবং ভেদাভেদ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রের প্রচেষ্টা বলে বাঙ্গালীরা মনে করে। এই তালিকা চুড়ান্তভাবে দাখিলের পর অনেক ভারতীয় ও মায়ানমারের নাগরিক পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসের বৈধতা পাবে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং অনেক উপজাতি পরিবার পূর্ণবাসন

এরজন্য ৮-১০ লাখ টাকার মতো অর্থ সহায়তা পাবে। এর থেকে বঞ্চিত হবে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বাঙ্গালীরা।

অতিবিলম্বে বৈষম্যমূলক স্মারকপত্র বাতিল করে উপজাতি এবং বাঙ্গালী অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হোক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *