পালিয়ে বিয়ে করায় মেয়েকে খুন, জামাইকে ফাঁসাতে মামলা

জাতীয়

সাত বছর আগে টাঙ্গাইলের গৃহবধূ পারুল আক্তার হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার কথা জানিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করার ক্ষোভ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে হত্যার পর নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন তার বাবা। এরপর একাধিক মামলায় ফাঁসাতে চেয়েছিলেন মেয়ের জামাইকে।

রোববার ঢাকার ধানমণ্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, পারুলের বাবা কুদ্দুছ খাঁ (৫৮) শুক্রবার আদালতে দোষ স্বীকার করে ওই ঘটনার রোমহর্ষক জবানবন্দি দেন।

এরপর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কুদ্দুছের বন্ধু মোকাদ্দেছ মণ্ডল ওরফে মোকা মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায়।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনার শুরু ২০১২ সালে। সেসময় কুদ্দুছের মেয়ে পারুল কালিহাতির একই এলাকার মো. নাছির উদ্দিন বাবুকে ভালবেসে ঢাকায় এসে বিয়ে করেন। ওই ঘটনায় পারুলের বাবা কালিহাতি থানায় জিডি করেছিলেন।
“দুই পরিবার মেনে না নেওয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়ায় বসবাস শুরু করেন পারুল ও নাছির। তবে তাদের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। সেই কথা পারুল তার বাবাকে জানিয়েছিলেন।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পারুলের বাবা তাকে ভালো ছেলে দেখে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে ভালো জীবনের আশা দেখিয়েছিলেন। তিন বছর পর ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই নাছির তার নানিকে দেখতে যান। সেই সুযোগে পরদিন পারুল তার বাবার আশ্বাসে টাঙ্গাইলে চলে যান।

ঘটনা জানতে পেরে নাসির তার শ্বশুর কুদ্দুছের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন। অন্যদিকে মেয়েকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে বন্ধু মোকাদ্দেছের বাসায় নিয়ে যান কুদ্দুছ। এরপর মোকাদ্দেছ তাকে প্রতিষ্ঠিত করবে- এমন আশ্বাস এবং স্বামী নাছিরের কাছ থেকে কিছুদিন লুকিয়ে থাকার কথা বলে তারা তিনজন জয়পুরহাটে চলে যান।
পিবিআই প্রধান বলেন, পরে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় একটি নদীর পাশে রাতে নির্জন জায়গায় নিয়ে মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন বাবা।

“এরপর বন্ধু মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় ওড়না ছিঁড়ে মেয়ের হাত-পা বাঁধেন এবং গলায় নিজের গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মেয়েকে হত্যা করেন কুদ্দুছ। পরে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে ফিরে যান তারা দুজন।”

মেয়ের কার্যকলাপে ‘অপমান’ বোধ থেকে রাগে-ক্ষোভে কুদ্দুছ তাকে হত্যা করেন বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই ঘটনার পর ২০১৫ সালের ৪ অগাস্ট মেয়ের জামাই নাছিরের পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেন কুদ্দুছ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই ঘটনার পর ২০১৫ সালের ৪ অগাস্ট মেয়ের জামাই নাছিরের পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেন কুদ্দুছ।
কালিহাতি থানা পুলিশ প্রথমে তদন্ত করে প্রেম করে বিয়ে করার সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত উল্লেখ করে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়।

বাদীর বার বার নারাজি আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ, টাঙ্গাইল পিবিআই, টাঙ্গাইল সিআইডি তদন্ত করে একই প্রতিবেদন দেয়
বনজ কুমার বলেন, আদালত পরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে জানায়, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারে। এরপর গত বছরের ২৭ নভেম্বর কুদ্দুছ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এতে পারুলের স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
দুদিন পর ৩০ নভেম্বর আদালত আশুলিয়া থানাকে মামলা নথিভুক্ত করে পিবিআই ঢাকা জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ১১ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানা মামলা নথিভুক্ত করে। এরপর পিবিআই তদন্ত নেমে নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।

বনজ কুমার বলেন, “ইতোমধ্যে বাদীকে (কুদ্দুছ) ডাকা হয়। বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, নিজেই তার মেয়েকে হত্যা করেছেন।
“কুদ্দুছের দেওয়া তথ্য যাচাই করতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা থেকে ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পিবিআই। ওই থানায় করা মামলার আলামত, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের সঙ্গে কুদ্দুছের বর্ণনার মিল পাওয়া যায়। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। সেখানে তিনি ও তার বন্ধু মোকাদ্দেছের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “কুদ্দুছ কৃষি কাজ করেন। তার আরো তিন মেয়ে আছে। পারুলের পালিয়ে বিয়ে করার ক্ষোভ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড।”

পারুলের স্বামী নাছির এখনো কারাগার রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনো তো মামলাটি…। এখন ছাড়া পাবেন বলে আশা করছি।”

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *