পাল্টাপাল্টি ‘কথার তর্কবানে’ বিদ্ধ হাবিব-দুলাল

সিলেট

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে প্রচারণার শুরু থেকেই প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বিষোদ্‌গার ও অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী ওরফে দুলালের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ‘কথার তর্ক’ চলছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, ইহতেশামুল (ট্রাক) আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলের একটি অংশ তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়। অন্যদিকে হাবিবুরের (নৌকা) কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী মাঠের দখল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালাতে থাকেন। দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা তখন থেকেই একে অন্যের সমর্থিত প্রার্থীদের নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি বিরূপ মন্তব্য ও বিষোদ্‌গার করতে থাকেন।

নির্বাচনী এলাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী সভাগুলোয় হাবিবুর ও ইহতেশামুলকে নিয়ে দৃষ্টিকটু ও কুরুচিপূর্ণ নানা কথার পাশাপাশি কাজের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখছেন। এমনকি প্রার্থীরাও পাল্টাপাল্টি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে পুরো নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ অনেকটা কদর্যময় হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, এ আসনে মোট প্রার্থী সাতজন। অন্যরা হচ্ছেন—জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনোয়ার হোসেন আফরোজ (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের মইনুল ইসলাম (মিনার) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলাম (ঈগল)। তবে হাবিবুর ও ইহতেশামুলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। এ ছাড়া কেউ কেউ তাদের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার তালিকায় আতিকুরকেও আলোচনায় রাখছেন।

ইহতেশামুলের অনুসারীদের দাবি, প্রচারণার শুরুর কয়েক দিন পর থেকেই হাবিবুর ও তার কর্মী-সমর্থকেরা একের পর এক ইহতেশামুলকে নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখছেন। এমনকি ইহতেশামুলের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে কাজ না করার জন্যও প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন। ইহতেশামুলের অনুসারীরা যেন ভোট দিতে কেন্দ্রে না যান, সে হুমকিও হাবিবুর তার সমর্থকদের দিয়ে দেওয়াচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নয়াবাজারে ইহতেশামুলের নির্বাচনী সভায় হাবিবুরের সমর্থকেরা হামলা চালিয়েছেন।

অন্যদিকে হাবিবুরের সমর্থকেরা দাবি করেছেন, ইহতেশামুল ও তার কর্মী-সমর্থকেরা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। মূলত শান্তিপূর্ণ একটি পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতেই তিনি (ইহতেশামুল) এমন করছেন। এ ছাড়া ইহতেশামুলের নির্বাচনী সভায় হাবিবুরের কোনো সমর্থক হামলা চালাননি বলেও তারা দাবি করেন।

যোগাযোগ করলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তিনি (ইহতেশামুল) আমাকে বিতর্কিত করতে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তাকে নিয়ে কিংবা তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আমরা কেউ কোনো বিরূপ মন্তব্য করিনি। বরং তিনি একের পর এক ভুয়া বিষয় উপস্থাপন করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করছেন। এসব অভিযোগের একটাও তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। মূলত নৌকার বিজয় নিশ্চিত জেনে তিনি এসব অভিযোগ এনে সহমর্মিতা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া তিনিই আমার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিষোদ্‌গার করে বক্তব্য রাখছেন।’

তবে ইহতেশামুল হক চৌধুরীর বলেন, ‘হাবিবুর সংসদ সদস্য হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। তার ও তার কর্মী-সমর্থকদের হুমকিতে আমার কর্মী-সমর্থকেরা অসহায় পড়ে পড়েছেন। হাবিবুরের বিরুদ্ধে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ বার সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করেছি। কিন্তু এসব বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই হাবিবুর ও তার কর্মী-সমর্থকেরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন সভা ও বৈঠকে আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার সভায় হামলাও হয়েছে।’

হাবিবুর ও ইহতেশামুলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল কেটে দেন। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *