বান্দরবানের থানচিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এরই মধ্যে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আর এ মাসে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত অন্তত ৩১ জন রোগী। এর সঙ্গে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই তলপেটে ব্যথা, ভাইরাসবাহিত জ্বর, ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানচির দুর্গম এলাকা মদকে প্রতিদিনই বাড়ছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী। আক্রান্তদের অধিকাংশই স্থানীয় ফার্মেসিতে ওষুধের জন্য ভিড় করায় বেড়েছে প্যারাসিটামল ও অ্যান্টিবায়োটিকজাতীয় ওষুধের চাহিদা। রোগীদের অনেকেই যানবাহনের খরচ বাঁচাতে থানচি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে চান না। জুমের কাজ ফেলে হাসপাতালে যেতেও অনীহা অনেকের। এর মধ্যেও কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেমাক্রী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খ্যাইসাপ্রুপাড়ার অজমনি ত্রিপুরার মেয়ে প্রীতি ত্রিপুরা (১৬) মারা যায়। এরপর গত ২ জুলাই জুমঘরে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চাইশৈউপাড়ার মংহ্লাচিং মারমার মেয়ে উম্যাচিং মারমা (৮)।
গতকাল শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে ৫০টি শয্যা থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৩১টি। সেখানের দুটি ওয়ার্ডে ২৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
সহকারী নার্স মাওয়াংশৈ মারমা ও সিনিয়র নার্স উর্মি তংচংঙ্গা জানালেন, এ মাসে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩১ জন। এর মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনজন এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল ভর্তি ছিলেন ২৭ জন।
ম্যালেরিয়া রোগী নাইন্দারীপাড়ার প্রধান চাইশৈপ্রু মারমা কারবারি বলেন, ‘ম্যালেরিয়া যারে ধরে, সে জানে কত কষ্ট। পুরা শরীর কাঁপে, ঘুমানো যায় না। এই হাসপাতালের সিটগুলো খুবই নোংরা। চিকিৎসাব্যবস্থা ভালো থাকলেও খানাপিনা তেমন ভালো না। দুই দিন ধরে দেখছি, সিটের অভাবে ম্যালেরিয়া বা জ্বরে আক্রান্ত অনেকে ভর্তি না হয়ে শুধু ওষুধ নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন।’
বাড়তি রোগী ও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেয়ার কথা জানিয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘পাহাড়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রব বেড়েছে। জ্বর, ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড রোগ ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই আশঙ্কাজনক হারে ম্যালেরিয়ার রোগী বাড়ছে। আমরা সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।’
এ অবস্থায় করণীয় জানিয়ে ডা. নোমান বলেন, আক্রান্তদের বিশ্রামে থাকতে হবে, সার্বক্ষণিক মশারি ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার ও সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। তরলজাতীয় খাবার ও বিভিন্ন ফলমূল খেতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াও জরুরি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, আগের চেয়ে পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার রোগী বাড়ছে। সময়মতো ওষুধ খেলে ম্যালেরিয়া রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হন। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় আমরা ওষুধ সরবরাহ করছি। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিজিবির মাধ্যমেও পর্যাপ্ত ওষুধ পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে বিনা মূল্যে ওষুধসহ চিকিৎসা পাচ্ছেন সবাই।
শেয়ার করুন