প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কবরস্থানে’ পাঠিয়ে দেওয়া রাজশাহী বিএনপির আহবায়ক মো. আবু সাঈদ চাঁদের বক্তব্য বিব্রত হলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিএনপি। এটাকে বরং ‘মুখ ফসকে’ বেরিয়ে যাওয়া একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য বলে দায় এড়াতে চাইছে দলটি।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর এটা নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি। বরং দলটি বলছে, এমন অনেক বক্তব্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দিয়ে থাকেন, কিন্তু সরকার-দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে, ‘হত্যার হুমকি’র এরিমধ্যে পুলিশ আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন বিএনপির ওই নেতাকে।
কেবল তাই নয়, এই হুমকির পর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স প্রধান শন জে. ম্যাকিনটোশ বলেন, ‘মার্কিন দূতাবাস যেকোনো ধরনের উত্তেজক ভাষা, ভীতি প্রদর্শন বা সহিংসতার হুমকির নিন্দা জানাচ্ছে।’
এদিকে, হুমকির পর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশের একাধিক স্থানে মামলা হয়েছে আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে।
আবু সাঈদ চাঁদ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুইটা মত কাজ করছে। একপক্ষ সুস্থ রাজনীতির স্বার্থে এই হুমকির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে। অপরপক্ষ আন্দোলনের স্বার্থে এনিয়ে চুপ থাকতে পরামর্শ দিচ্ছে। ব্যবস্থা নিলে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বে বলে মতামত তাদের।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবু সাঈদ চাঁদের হুমকি প্রসঙ্গে বলেছেন, এটাকে ‘মুখ ফসকে’ বেরিয়ে যাওয়া একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য। তিনি বলছেন, এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। তারা বলতে চেষ্টা করছে, এটা চাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়, সামগ্রিকভাবে বিএনপির রাজনীতি এটাই। ফলে বিএনপি যদি এখন তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে দলের পক্ষ থেকে এটাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য বলে যে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা টিকবে না। আওয়ামী লীগের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এটাকে আইন-আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিতে চেয়েছেন। এটাও কিন্তু হত্যার হুমকি। কয়েকদিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, যে সুশীলরা আমাদের বুদ্ধি দিতে যাবেন, সেই সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেব। তার এ বক্তব্যও কিন্তু হত্যার হুমকি। রাজশাহীর আবু সাঈদ চাঁদের কথাটাও একই ধারার। এসব বক্তব্য সমর্থন করি না। তবে এখনকার পরিস্থিতি খারাপ। কেউ ধৈর্য ধরতে পারছে না। সবাই হুট-হাট এসব বক্তব্য দিয়ে ফেলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র অবশ্য বলছে, বিএনপি যেহেতু হত্যার রাজনীতি সমর্থন করে না, তাই তার বিরুদ্ধে এখনই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রমাণ করা দরকার, এটা তার নিজস্ব বক্তব্য, এর দায় দল নেবে না।
আবার অন্যপক্ষ মনে করে, দেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এমন অবস্থায় দল যদি চাঁদের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বে। তাদের ধারণা হবে, কেউ ভুল করে বিপদে পড়লে দল তার পাশে না থেকে উল্টো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে ‘হত্যার হুমকি’ দেন। ওই জনসভায় চাঁদ বলেন, ‘আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। একদফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।’ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান।
শেয়ার করুন