ফারাক্কা বাঁধের কারনে সুন্দরবন হুমকিতে

জাতীয়

শেখ রাসেল
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি

ফারাক্কা বাঁধের কারণে সুন্দরবন ও পশুর নদের প্রতিবেশ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। ইউনেস্কো সুন্দরবনের ক্ষতির এক নম্বর কারন হিসেবে গঙ্গা নদীর উজানে ভারতের নির্মান করা ফারাক্কা ব্যারাজকে চিহ্নিত করেছে। ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মানের পর থেকে সুন্দরবনের নদী-খালে মিষ্টি পানির প্রবাহ ব্যাপক ভাবে কমে গেছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষা করতে হলে গঙ্গা নদী দিয়ে মিষ্টি পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ২২ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে মোংলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ও সার্ভিস বাংলাদেশ’র আয়োজনে ”ফারাক্কার প্রভাবে বিপর্যস্ত সুন্দরবন ও পশুর নদঃ আন্ত:সীমান্ত নদীতে বাংলাদেশের অধিকার” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন।
রবিবার সকাল ১১টায় বিশেষ সেমিনারে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মেঃ নূর আলম শেখ। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মোংলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কে এম রব্বানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস, সুন্দরবন জাদুঘরের পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, অধ্যক্ষ মোঃ সেলিম, প্রভাষক শ্যামা প্রসাদ সেন, ড. অসিত বসু, ড. অপর্ণা অধিকারী, মোংলা সরকারি কলেজের প্রভাষক খান আরিফুজ্জামান, প্রভাষক খাদিজা আক্তার ও সার্ভিস বাংলাদেশ’র সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নবলোক’র প্রদীপ বিশ্বাস, সিএনআরএস’র রাখি, জেলে সমিতির বিদ্যুৎ মন্ডল, আব্দুর রশিদ হাওলাদার, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার নাজমুল হক, হাছিব সরদার, রাসেল শেখ, নারীনেত্রী কমলা সরকার প্রমূখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোংলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কে এম রব্বানী বলেন আন্ত:সীমান্ত নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। পলি পড়ে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সভ্যতার সুযোগ যত গ্রহণ করছি প্রকৃতি ততো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দূষণ রোধে প্লাস্টিক রিসাইকল এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন আমরা স্লুইস গেটের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছি। প্রকৃতি নির্ভর সমাধানের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। খাদ্যের অভাব এবং দূষণের কারনে পশুর নদের ইলিশ মাছ ছোট হয়ে যাচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে মোঃ নূর আলম শেখ বলেন আন্ত:সীমান্ত নদী গুলোর ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারত ও অন্যান্য রাস্ট্রগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার আন্ত:সীমান্ত নদীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪টি ও ৩টি। ৫৪টি নদীর মধ্যে ৩৬টি নদীর উপর ভারত মোট ৫৪টি ব্যারাজ এবং ড্যাম তৈরি করেছে। আন্ত:সীমান্ত নদ-নদীতে বাঁধ বা কোন প্রতিবন্ধকতা নির্মানের জন্য কিছু আন্তর্জাতিক আইন আছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই আইনগুলোর কোন তোয়াক্কা করছে না। সেমিনারের সভাপতি মোঃ নূর আলম শেখ অংশীরাস্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের পানি প্রবাহ আইনে (১৯৯৭) বাংলাদেশকে অনুস্বাক্ষর করার আহবান জানায়। সেমিনারের আগে সকাল ১০টায় বাপা, সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ও সার্ভিস বাংলাাদেশ’র আয়োজনে ফারাক্কা বাঁধের অভিঘাতে বিপর্যস্ত সুন্দরবন ও পশুর নদ রক্ষার দাবিতে মোংলা নদীতে নৌ-বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।##

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *