ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরব বিশ্বের সমর্থন বেড়েছে

বিশ্ব

ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর আরব বিশ্বে ফিলিস্তিনিপন্থি মনোভাব প্রবল হয়ে উঠেছে। আরব দেশগুলোর মসজিদ, ফুটবল স্টেডিয়াম ও গ্রামীণ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে স্লোগান চলছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে আরব জনতা।

ডয়চে ভেলে জানায়, আরব বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে প্রক্রিয়া চলছিল, হামাসের হামলার পর সেটির প্রতি মনোযোগ সরে গেছে। এখন ফিলিস্তিনিদের প্রতি নতুন করে আরবদের সমর্থন দেখা যাচ্ছে এবং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছিলেন যে, দুই পক্ষ ‘প্রতিদিনই একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ’ হচ্ছে। এখন সেসব কথা যেন বহু দিনের পুরোনো বাক্য বলে মনে হয়। ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনালাপে জানিয়েছেন, সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে। সৌদি আরব এখন প্রকাশ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা বলছে এবং তাদের ফিলিস্তিনি জনগণের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করছে। ফলে ইসরায়েলে হামলা করে ফিলিস্তিনিদের বিষয়টি আবার সামনে নিয়ে আসা যে হামাসের একটি বড় সাফল্য- সেটা বললে অত্যুক্তি হবে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো রিচার্ড লেব্যারন মনে করেন, এই হামলা সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্য সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিষয়ে পরিবর্তন আনবে।

এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, হামাসের হামলাকাণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার প্রতি সংহতি জানিয়েছে সাধারণ আরব জনতা। ফিলিস্তিনের রামাল্লা থেকে বৈরুত, দামাস্কাস, বাগদাদ এবং কায়রোতে মানুষ ফিলিস্তিনিদের সাফল্য কামনার জন্য প্রার্থনা জানিয়েছে। দখলকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লায় কফির দোকান পরিচালনা করেন ৫২ বছর বয়সী ফারাহ আল সাদি। তিনি বলেন, ‘সারা জীবন দেখেছি, ‘ইসরায়েলিরা আমাদের মারছে, আমাদের ভূমি কেড়ে নিচ্ছে আমাদের সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে।’ সাদির নিজের ছেলে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি। সাদি জানান, হামাস যা করেছে, তাতে তিনি খুশি। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি এই কফির দোকানদার গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

ইসরায়েলে গত শনিবার হামাসের হামলার পর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও রাজধানী বৈরুতে সাধারণ মানুষ উল্লাস করে। গত ২২ বছর ধরে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ইসরায়েলি বাহিনী দখল করে রয়েছে। দুই পক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। লেবাননের একটি মসজিদের সামনে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পক্ষে সমাবেশ হয়। সমাবেশে ‘ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা চমৎকার ও নায়কোচিত মহাকাব্য লিখছেন’ বলে স্লোগান দেয়া হয়। লেবানের কৌতুক অভিনেত্রী শাদেন ফাকিহি ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের সমালোচনা করে ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘আপনারা ফিলিস্তিনিদের কাছে কী আশা করেন? তারা প্রতিদিন নীরবে খুন হবেন আর কিছুই করবে না?’

তিউনিসিয়ার রাজধানীর স্কুলগুলোয় ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সংহতি সমাবেশের ডাক দেয়। তিউনিসিয়ার সরকার ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ও দখলদারত্বের বিরুদ্ধে তাদের দাঁড়ানোর অধিকারের’ প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের অপেরা হাউসে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *