রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার বলয় সৃষ্টি করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিজিবি মোতায়েনসহ সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছে বিপুল সংখ্যক এপিবিএন, বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। প্রধান ফটকের সামনে বেরিকেট ছাড়াও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে এপিসি, জলকামানসহ রায়ট কার।
আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে রাতে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টার ঘটনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপরে হামলার পরই এই নিরাপত্তা বলয়। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষোভ করেন, স্লোগান দেন রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের দাবিতে। রাত ৮ টা পর্যন্ত পরিস্থিতির স্বাভাবিকই ছিল। তবে এরপর আন্দোলনরতদের মধ্য থেকে এক দল অতি উৎসাহী বারবার বঙ্গভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন একদল বিক্ষোভকারী। সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থানের ফলে তারা কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেসময় বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া একজন সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়। গুলিবিদ্ধরা হলেন, ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল ও শফিকুল ইসলাম । সাউন্ড গ্রেনেডে আহত তরুণের নাম আরিফ।
আজ বুধবার বঙ্গভবন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, গতকাল রাতের উদ্ভূত ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে আজ বঙ্গভবন এলাকায় আরো বেশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যদিও আজকে এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারী বা বিক্ষুব্ধ জনতাকে দেখা যায়নি। তবে আমরা সতর্ক আছি, পুলিশের পাশাপাশি মোতায়ন রয়েছে এপিবিএন, বিজিবি, সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ডিএমপি’র নির্দেশনা অনুযায়ী আজ বঙ্গভবন এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তোপের মুখে দেশত্যাগ করেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
সম্প্রতি একটি পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।
এরপর নতুন করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারীরা।
শেয়ার করুন