বজ্রপাত ও পরিবেশ সুরক্ষায় তালগাছ

হবিগঞ্জ

এম ইয়াকুব হাসান অন্তর
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

তাল বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফলজ বৃক্ষ, এটি পাম্ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বহুবর্ষজীবি একটি বৃক্ষ। আমাদের দেশে ভাদ্র মাসে পাকা তালের রস দিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক পিঠা তৈরি আবহমান বাংলার চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। তালগাছ থেকে উৎপন্ন কচি ও পাকাফল, তালের রস ও গুড়, পাতা, কান্ড সবই আমাদের জন্য উপকারী। কচি তালবীজ সাধারণত তালশাঁস নামে পরিচিত যা বিভিন্ন প্রকার খনিজ উৎপাদন ও ভিটামিন এ পরিপূর্ণ । মিষ্টি স্বাদের কচি তালের শাঁস শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় বরং পুষ্টিতে ভরপুর তালের শাঁস শরীরকে শীতল রাখে এবং তৃষ্ণা মিটায়। তালের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে নানাবিধ রোগ থেকে রক্ষা করা সহ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া প্রত্যাহিক জীবনে বিভিন্ন কাজে তালগাছ আমাদের নিত্য অনুষঙ্গ। তাল গাছের কাঠ ঘরের খুঁটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে তালগাছের নৌকা বিশেষত হাওর অঞ্চলে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ন। পূর্বেকার দিনে বিভিন্ন ধর্মীয় ও অন্যান্য পুস্তক মূলত তালপাতায় লেখা হতো। গ্রামে গঞ্জে এখনো তালপাতার হাতপাখার রয়েছে বিশেষ কদর। তাছাড়া তালপাতা জ্বালানির পাশাপাশি মাদুর, ঘরের ছাউনি ও বেড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বত্র অধিকহারে তালগাছ রোপন এখন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বজ্রপাতের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এর তথ্য মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ২০০০-২৪০০জন মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা যায় এবং ৫০হাজারেরও অধিক মানুষ মারাত্মক আহত হয়।তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৬সালে মে মাসে একদিনের ব্যবধানে ৮২ জন সহ সর্বমোট ৪৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতের কারণে প্রতিনিয়তই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় ২০১৮ সালে বজ্রপাতে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৫৯ জন।মাত্রাতিরিক্ত বজ্রপাতের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ বজ্রপাত কে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে এর প্রতিকারে করণীয় নির্ধারণে তৎপর হয়। বজ্রপাতের কারণে অতিউচ্চ ভোল্টেজ সম্পন্ন বিদ্যুৎ সাধারণত ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা বা বস্তুকে আঘাত হানে। এজন্য পরিবেশ বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদগন পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ করে বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার জন্য অধিক হারে তাল গাছ রোপণের উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারিভাবে দেশব্যাপী কয়েক মিলিয়ন তালগাছ রোপণ করা
হয়েছে। এছাড়া মাটির ক্ষয় রোধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তাল গাছের ভূমিকা রয়েছ ।বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বজ্রপাত, বন্যা সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের পাশাপাশি সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে আমাদের সকলকে এই পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ রোপনের সচেষ্ট হতে হবে ।এ বিষয়ে প্রকৃতি প্রেমিক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) হবিগঞ্জ এর সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ রিপন বলেন পরিবেশ রক্ষায় ও বজ্রপাত থেকে রক্ষায় তালগাছ রোপনের বিকল্প নেই। সকলের এ বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিৎ। তিনি আরোও জানান আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমাদের লাখাই উপজেলার হাওরাঞ্চলে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিগত ৫ বছর যাবত সীমিত সংখ্যক তালের চারা রোপন করে আসছি। এ বছরও আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩ হাজার তালের চারা রোপন এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল সড়কে তালের চারা রোপনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *