বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না: যুক্তরাষ্ট্রকে কাদের

জাতীয়

১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে ‘বন্ধুত্ব নষ্ট না করতে’ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালের বেদনাদায়ক অতীতের পরও বাংলাদেশ বন্ধুত্ব চায়। কিন্তু এভাবে করলে সম্পর্কে ফাটল ধরবে।

শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সভায় তিনি এই প্রতিক্রিয়া দেন। দলের ২৩তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা উপকমিটির সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

কাদের বলেন, ‘বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না। আপনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। আমাদের অতীতের অনেক বেদনা আছে; পঁচাত্তরের, একাত্তরের। তার পরও আমরা বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু এভাবে করলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে।

‘কারো ফরমায়েশ, কারও হস্তক্ষেপ শেখ হাসিনা শুনবেন না। তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না।’

কী বলেছিলেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা

বরাবরের মতো জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার আগে আগে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা নানা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। সরকারও প্রায় প্রতিবারই এসব বক্তব্যে অসন্তোষ জানিয়ে আসছে। বলছে, দেশের বিষয়ে বিদেশের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

এর মধ্যে শনিবার রাজধানীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের তিন দিন আগে বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আবার প্রতিক্রিয়া জানায় ঢাকায় যুক্তরাজ্যের দূতাবাস।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বুধবার ঢাকায় নিহত ও আহতদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। আমরা ঢাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে উদ্বিগ্ন। আইনের শাসনকে সম্মান জানাতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

‘সহিংসতার এই খবরগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং মত প্রকাশ, সভা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা সরকারি কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করছি।’

আগের দিন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ১৫টি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা এক যৌথ বিবৃতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। তারা বলেন, ‘বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশের সাফল্যকে আরও উৎসাহিত করতে আগ্রহী। আমরা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে কাদের তুলে ধরেন ২০২০ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা। নভেম্বরের সেই ভোটে ট্রাম্পের পরাজয়ের পর তার সমর্থকরা দেশটিতে সহিংসতা, সংঘর্ষে জড়ায়।

এভাবে করলে বন্ধুত্বটা তো ফাটল ধরবে: পিটার হাসকে বার্তা

কাদের বলেন, ‘আমরা ৬ জানুয়ারি আমেরিকার গণতন্ত্রের চেহারা দেখেছি। আজ পর্যন্ত এক পক্ষ ইলেকশন রেজাল্ট মেনে নেয়নি। নির্বাচনী জালিয়াতি শুধু বলা হয় না, এসব ব্যাপারে এখন আমেরিকায় বলা হচ্ছে।

‘পাঁচটা লোক মারা গেছে। কংগ্রেস আক্রান্ত হচ্ছে। ন্যান্সি পেলোসি (নিম্নকক্ষের সাবেক স্পিকার) কীভাবে লুকিয়েছিলেন, সে দৃশ্য আমরা দেখেছি। এই যে বড় বড় কথা বলেন, দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত, বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না। আপনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই।

‘আমাদের অতীতের অনেক বেদনা আছে; পঁচাত্তরের, একাত্তরের। তার পরও আমরা বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু এভাবে করলে বন্ধুত্বে তো ফাটল ধরবে। সবার সঙ্গে লেনদেন আমাদের আছে। অহেতুক কেন এসব কথা বলেছেন?’

আমেরিকায় যখন তখন গুলিতে প্রাণহানির কথাও তুলে ধরেন কাদের। বলেন, ‘ডেইলি ম্যাস শুটিং হচ্ছে সপ্তাহে অন্তত দুইটা। এক-একটায় পাঁচ-দশজন, ১৯টা শিশু ম্যাস শুটিংয়ে মারা গেছে। আপনারা মানবাধিকারের কথা বলেন। আর পুলিশকে সেখানে ধরা হয়েছে তারা যথাসময়ে সিকিউরিটি দিলে এই ঘটনা ঘটত না; সিকিউরিটি ল্যাপসেস। তা আমাদের আদালতপাড়া নিয়ে কথা বলেন। আপনাদের ওখানে কী হয়?’

‘জার্মানির ভেতরের খবরও সুখকর নয়’

জার্মানিতে সরকার উৎখাতের চেষ্টার অভিযোগে কয়েকজনকে আটকের বিষয়টিও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘সবাই নিজের চেহারাটা আগে দেখুন। অবাক লাগে আমার কালকে মিডিয়া দেখলাম, জার্মানিতে ফাররাইট (কট্টর ডানপন্থি মতাদর্শীরা) একটা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে। ক্যু করতেছে, ক্যু করার চক্রান্ত করছে। কাজেই কারও ভেতরের খবর এত সুখকর নয়।’

কয়বার প্রধানমন্ত্রী পাল্টাল, যুক্তরাজ্যকে প্রশ্ন

যুক্তরাজ্যে সরকারের অস্থিতিশীলতার বিষয়টি নিয়েও বক্তব্য দেন কাদের। বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে কয়বার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হলো? আমরা তো সে তুলনায় অনেক ভালো আছি। যে কেউ ইন্টারফেয়ার করার দরকার নেই। আপনাদের এত কিছু হচ্ছে, আমরা তো ইন্টারফেয়ার করি না।

‘আমাদের তো এত বছর হয়েছে এই ঘটনা ঘটেনি। দুজন এমপি ব্রিটেনে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *