দেশে মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। যার মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। বাকি ৪৮ হাজার ৯৭৩টি হচ্ছে কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি প্রাইমারী স্কুল। কিন্তু বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯০ ভাগেরই নিবন্ধন নেই। এই হিসাবে দেশে প্রায় ৪৪ হাজার প্রাইমারী স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন নিবন্ধনহীন রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আগে একটি বিধিমালা থাকলেও সেটি বাস্তবে কাজে দেয়নি। এখন সেটিকে আরও যুগোপযোগী করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে বেসরকারি বিদ্যালয় চালাতে হলে নির্ধারিত শর্ত মেনে নিবন্ধন ও শিক্ষাবিষয়ক (একাডেমিক) স্বীকৃতি লাগবে। তা ছাড়া চালানো যাবে না। শিক্ষাবিষয়ক স্বীকৃতি দেবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং নিবন্ধন দেবে প্রাথমিকের বিভাগীয় উপপরিচালক।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে আইনি যাচাই বাছাই (ভেটিং) করে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন খুব শিগগিরই এটি জারি করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ২০১১ সালের বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৯০ ভাগ বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়াই এখনো চলমান আছে। এখন সংশোধিত বিধিমালা জারি করা হবে। এর ফলে বেসরকারি পর্যায়ের ইংরেজি মাধ্যম বাদে বাকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো (কিন্ডারগার্টেনসহ) নিয়মনীতির আওতায় আসবে। নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া এগুলো চলবে না।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দেবেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে একাডেমিক স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত দেবেন। আর নিবন্ধনের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে বিভাগীয় উপপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দেবেন। বিভাগীয় উপপরিচালক নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত দেবেন। এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরেও আসতে হবে না। তবে বিভাগীয় উপপরিচালকের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আপিল করা হবে। নিবন্ধন ফি ২০১১ সালের বিধিমালা অনুযায়ীই রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিধিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মেনে নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে একাডেমিক স্বীকৃতি তিন বছরের জন্য এবং নিবন্ধন এক বছরের জন্য দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি শর্ত পুরণ করে তাহলে তা ধারাবাহিকভাবে চলবে। না হলে বাতিল করা হবে।
সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বইগুলো বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে। এর বাইরেও বই পড়ানো যাবে। তবে যদি কোনো বই পড়াতে চায় তাহলে সেটি সরকারকে জানাতে হবে। তাতে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে বেসরকারি হওয়ায় কত টাকা বেতন (টিউশন ফি) নেওয়া হবে সেটি সরকার নির্ধারণ করে দেবে না। কিন্তু কত টাকা নেওয়া হচ্ছে তা নির্ধারিত ফরমে সরকারকে জানাতে হবে। তখন সরকার বিবেচনা করবে সেটি যৌক্তিক না অযৌক্তিক।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান বর্তমান চালু বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকেও নিবন্ধন নিতে হবে। সবাইকেই নিবন্ধন নিতে হবে। যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্তরে পড়ানো হয় সেগুলোরও প্রাথমিক স্তরের নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি নিতে হবে। বিধিমালা জারির পর তিন মাসের সবাইকে নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে বলা হবে।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা চাচ্ছি কোনো বিদ্যালয় যেন একাডেমিক স্বীকৃতি ও নিবন্ধন ছাড়া পরিচালিত না হয়। এটি হলে আমরা জানতে পারব কতগুলো বিদ্যালয় চলছে, সেখানে ন্যুনতম অবকাঠামো, শিক্ষক, তহবিল, পরিচালনা কমিটি আছে কি না। আমরা চাইব ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারির পর থেকে যেন একাডেমিক স্বীকৃতি বিহীন ও নিবন্ধনবিহীন কোনো বেসরকারি বিদ্যালয় না চলে।
সংবাদ সম্মেলনে সাক্ষরতা দিবসের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
শেয়ার করুন