তানজিল হোসেন, গোয়াইনঘাট: সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় টানা পাঁচদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার ২০৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এই পরিস্থিতি আরোও অবনতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে গোয়াইন ও সারি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতেকরে গোয়াইনঘাটের ৩১৫ বর্গ কি. মি. এলাকা বন্যা দুর্গত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বন্যার সতর্কতামূলক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা সাধারণ মানুষদের সামনে তুলে ধরছেন। তিনি বন্যা ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার জনগণকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে/ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে অনুরোধ করছেন। এছাড়া জরুরি কাগজপত্র, মালামাল, গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সবাইকে সতর্ক করছেন। ইউএনও জানান, ১৮ জুন থেকে ২০ জুন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে আরো ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এতে গড়ে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ মি.মি. এর মতো বৃষ্টিপাত হবে। এসব বৃষ্টির পানি ইতোমধ্যে নেমে আসতে শুরু করেছে এবং পরবর্তীতে এসব পানি নেমে আসলে বন্যা পরিস্থিতি আরোও অবনতি ঘটবে।
জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে উদ্ধার কার্যক্রম, আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা এবং ত্রাণ কার্যক্রমসহ বন্যা দুর্গত এলাকার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য সরকারি ট্যাগ অফিসারগণকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বন্যা কবলিত স্থান থেকে মানুষজনকে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৪৭টি নৌকা রয়েছে। এছাড়া ১০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ জানান, গোয়াইনঘাটে ইতোমধ্যে ১৯ হাজার ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। পাশাপাশি ৯৮ হাজার ৪০০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ এছাড়া দেড় হাজার হেক্টর কৃষি জমি নিমজ্জিত রয়েছে। বর্তমানে ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯৬ জন পুরুষ, মহিলা ও শিশু আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, পানিবন্দি মানুষদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে সিলেট জেলা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।সারি-গোয়াইনঘাট সড়ক, হাতিরপাড়া-হাকুর বাজার ও মানিকগঞ্জ সড়ক, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়ক ও গোয়াইনঘাট-বঙ্গবীর সড়কসহ প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি গ্রামের প্রত্যেকটি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানিবন্দি মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সময় যত যাচ্ছে পানি ততই বাড়ছে। নতুন করে উঁচু জায়গার ঘরবাড়ি আরোও প্লাবিত হচ্ছে।গৃহিণী রওশন আরা বেগম বলেন, শুকনো লাকড়ি না থাকায় রান্না-বান্না নিয়ে চিন্তিত রয়েছি। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে যেকোন সময় পানি চুলায় ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শেয়ার করুন