বন্যার পর খরায় পুড়ছে মানুষ

সুনামগঞ্জ

বন্যায় মানুষের জীবন হয়ে উঠেছিলো দুর্বিষহ। জীবনের কঠিন সময় পার করেছে মানুষ। এমন দুরূহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পর শান্তিগঞ্জ উপজেলাবাসীর জীবনে আসে নিরানন্দ ঈদ। ঈদের পর থেকে আসে প্রচণ্ড খরতাপ। চারদিন ধরে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে রোদের তীব্রতা। রোদের এ তীব্রতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে  উপজেলাবাসীর জীবন।

তবে একদিকে যেমন জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ অন্যদিকে বন্যায় ভিজে যাওয়া বই, জরুরি কাগজপত্র, লেপতোশক, আসবাবপত্র শুকিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। পেশাজীবী মানুষদের জীবিকা স্থবির করে ফেলছে এমন রৌদ্রঝাঁজ। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। আছে বৃষ্টির সম্ভাবনাও।

জানা যায়, ঈদ উল আযহার পর থেকে রাতে রিমঝিম বৃষ্টি, হালকা ও মাঝারি মানের বাতাস বইলেও দিনের বেলায় প্রচণ্ড তাপ নিয়ে উঠে সূর্য। এতে গরমের প্রকোপ বাড়ে। যার প্রভাব পড়ে জনজীবনে। ঈদ ও ঈদের পরের দিন জেলার তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। মঙ্গলবার ৩৬ ও বুধবার ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবারের তাপমাত্রা ছিলো সর্বোচ্চ। প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবারে সমস্ত বিভাগের আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকার কথা থাকলেও রাতে বাতাস ও বৃষ্টি লাগাম টানে তাপমাত্রার। সকালে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে তেজ বাড়ে সূর্যের। বাড়ে গরম, সেই সাথে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলাও বাড়ে।

টানা গরমে হাওর পাড়ের মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়ছে। জেলেরা নদী-হাওরে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। শ্রমজীবীরা বের হতে পারছেন না ঘর থেকে। সব ধরণের ব্যবসায়ও ক্রেতাদের অভাবে স্থবিরতা চলে এসেছে। কাঁচামাল বাজারের ব্যবসায়ীদের চিন্তা বেড়েছে বেশি। পরিবহণেও আছে যাত্রী হাহাকার। প্রচণ্ড রোদে মানুষ ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না তাই যেসব বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় থাকতো বেশি সেখানে বিকালের আগ পর্যন্ত কোনো লোক সংখ্যা নেই বললেই চলে। তার সাথে আছে প্রচণ্ড বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে মনে হয় গায়ে ফুঁসকা পড়বে। বন্যার দুর্বিষহ স্মৃতি পেচনে ফেলে বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য লেখাপড়া শুরু করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহবুব হাসান অনিক বলে, প্রথমে করোনা ভাইরাস তারপর বন্যা। আমাদের লেখাপড়াকে একেবারেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। বন্যায় আমার জানামতে অনেক শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে। আমার বইও ভিজেছে। শুকিয়ে পড়াশোনা শুরু করবো ভাবছি৷ কিন্তু যে গরম পড়েছে, তার উপরে লোডশেডিং। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থা মোটেও ভালো নেই।

দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন আসুক মিয়া। ঈদের পর থেকে কাজে যাচ্ছেন না তিনি। বন্যায় তার ঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোদ উঠায় অন্যের কাজে যেতে পারছেন না তাই নিজের বাড়িতেই কাজ করছেন চারদিন ধরে। আসুক মিয়া বলেন, আমরা দিন মজুর মানুষ। প্রতিদিন কাজে যেতেই হয়। কিন্তু যে রোদ উঠে, এতে সারাদিন কাজ করলে অসুস্থ্য হয়ে পড়বো। তাই এ সুযোগে বাড়িতে নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি।

মাছুম আহমদ ফল ব্যবসায়ী। তিনি জানান, যে গরম পড়েছে এতে আম, আপেল ইত্যাদি ফলমূল বেশি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে। প্রায় একই বক্তব্য ডিম ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিলের।

চা বিক্রেতা রাজু উদ্দিন বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমাদের দোকানের কাস্টমার একেবারে নাই। গরম পড়লে চা একটু কম বিক্রি হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *