ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বেশিরভাগ অঞ্চল। বন্যায় মানুষ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার। অনেক দিন থেকে বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয় হলেও প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি আনুমানিক কোটি টাকারও বেশি।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসাসহ ৫০ টি প্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। পাশাপাশি বিল্ডিং এর দেয়াল, ফ্লোর, আসবাবপত্র, প্রতিষ্ঠানের দরজা, জানালা, দেয়াল, বৈদ্যূতিক জিনিসপত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো সহ মোট ১৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলাগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের নিচ তলার বেশির ভাগ অংশে পানি। উপরের তলায় আশ্রয় কেন্দ্র। আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো নৌকা যোগে যাতায়াত করেন। হাকালুকি হাওরের মধ্যখানে বিদ্যালয়গুলো যেন এক খন্ড ছোট দ্বীপের মত।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যার কারণে উপজেলার ১৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৯ টি মাদ্রাসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা মিলিয়ে মোট ৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বন্যার পানিতে রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার ৩ টি কলেজে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এছাড়াও ৩০ টি বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন (কেজি)স্কুল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব স্কুলের বেশির ভাগ টিন শেডের থাকার কারনে বেড়া ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।বন্যার পানি কমে গেলে সংস্কার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হবে।
শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুলোমন দাস বলেন,বিদ্যালয়ের বিল্ডিং এর অর্ধেক পানির নিচে।দুইতলায় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে সেখানে ৫০ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
৪ রুম বিশিষ্ট বিল্ডিং এর বারান্দা,ফ্লোর,পানির পাইপের লাইন, ট্যাংক, বৈদ্যূতিক ফ্যান, পানির নিচে থাকা ৩ টি টয়লেট,আসবাবপত্র সহ অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এসবের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ থেকে -৪ লাখ টাকার মত।
জায়ফর নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতীশ চন্দ্র দাস বলেন, বন্যার পানি আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠ সহ বিল্ডিং এর নিচ তলায় উঠেছে। বিদ্যালয়টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের দু-তলা ভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বন্যার্তদের।
বিজ্ঞানাগারে পানি ঢুকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।আসবাবপত্র,বিল্ডিং এর নিচ মেরামত,টিন শেড রুমের নিচ সহ সব কিছু মেরামত করতে প্রায় দুই আড়াই লক্ষ টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আলা উদ্দিন বলেন, বন্যার কারনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়,মাদ্রাসা,কলেজ সহ ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা তো উল্লেখ করার মত নয় তবে সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে আসবাবপত্র, ফ্লোর, টিনশেডের রুম, ইলেকটিসিটি নিয়ে প্রায় ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার মত হতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোতে মানুষ বসবাস করছে তাই এসব প্রতিষ্ঠানে ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি হবে।
শেয়ার করুন