বালুখেকোদের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। যেকোন সময় পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা স্থানীয় সচেতন মহলের।এছাড়াও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে গোটা উপজেলায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। হামলা, হত্যার হুমকি চাঁদাবাজীর অভিযোগও আসছে বিস্তর। যখন তখন খুনাখুনির ঘটনাও ঘটার আশঙ্কা তাদের। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারের বিভিন্ন দফতরে বারবার অভিযোগ দেয়া হলেও কুম্ভকর্ণের নিদ্রা আর ভাঙছেইনা। তবে প্রশাসনের বক্তব্য অন্যরকম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেলেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।
বিভিন্ন অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের ঢালা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত, এমনকি কখনো কখনো দিনেরাতে সমান তালে পাল্লা দিয়ে বালু উত্তোলন করে পাঠানো হচ্ছে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে। ইজারা বহির্ভুতভাবে বালূ উত্তোলনের ফলে এ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের অস্তিত্ত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, ঢালা নদী তীরবর্তি ঢালারপার, উত্তর ঢালারপার, দক্ষিণ ঢালারপার, মোস্তফা নগর, মধ্যরাজনগর পূর্বপাড়া ইত্যাদি গ্রামের রাস্তা ঘাট স্কুল মাদরাসা ঈদগাহ, বাজার, কবরস্থান, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইত্যাদিসহ ঘরবাড়ি যখন তখন নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে।
কোম্পানীগঞ্জের ঢালা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব যারা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন উপজেলার মেঘারগাঁও গ্রামের জজ মিয়ার দুই ছেলে রিপন মিয়া ও শিপন মিয়া এবং স্বয়ং জজ মিয়া।
তাদের বিরুদ্ধে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ দেয়া হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিলেটের জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার- এমনকি প্রধানমন্ত্রী বরাবরও। কিন্তু এলাকার বিপর্যয়রোধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি এখনো। উল্টো এসব কারণে সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট হচ্ছে। কাঁচা টাকার লোভে বাড়ছে পারস্পরিক তিক্ততা। এমন কি হামলা মামলা ও অস্ত্রবাজীর ঘটনাাও ঘটছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতরা হলেন ঢালারপার গ্রামের রুপা মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর, আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন, মুলুক হোসেনের দুই ছেলে বাবুল মিয়া ও জামাল মিযা, রুপা মিয়ার আরও দুই ছেলে এমরান ও কবির মিয়া, মৃত তারা মিয়ার ছেলে আবু বকর সিদ্দিক, মৃত মজিদ মিয়ার ছেলে রুপা মিয়া, আবু বাকর সিদ্দিকের জসিম উদ্দিন ইসরাফিল আলী ও জুয়েল রানা, মিজান মিয়ার ছেলে শফিক ও রফিক, হযরত আলীর ছেলে ফারুক ও মাসুক মিয়া, মৃত রূপচান মিয়ার ছেলে আসাদুল হক এশাদুল হক সাজিদুল হক আজিজুল হক ও ফয়জুল হক, মৃত হালিম মিয়ার ছেলে রতন ও নয়ন মিয়া, মৃত আব্দুল লতিফ ফকির চানের ছেলে সিরাজুল হক ও আজিজুল হক, আজিজুল হকের ছেলে ছাইদুল, মুল্লুক হোসেনের ছেলে মনির ও কামাল মিয়া, মস্ত মিয়ার ছেলে জাহিদ মিয়া ও দক্ষিণ ঢালারপার গ্রামের মৃত কাইয়ুমের ছেলে বিল্লাল (৪২) প্রমুখ।
তারা শুধু অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথেই জড়িত নয় বরং বিনা অনুমতিতে অন্যের জমি থেকে বালু চুরির সাথেও জড়িত। সম্প্রতি তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় গত ২ জুলাই রাতে দক্ষিণ ঢালারপার গ্রামের মৃত আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে মাসুক চৌধুরীর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে বলে তার ভাই সুজন চৌধুরী কোম্পানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুজন গ্রেফতার হলেও অন্যরা জামিন নিয়ে ফের হত্যার হুমকি ও মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে বলে জানিয়েছেন সুজন চৌধুরী।
কোম্পানীগঞ্জের অবৈধ বালুখেকোরা সবসময় সশস্ত্র অবস্থায় থাকেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। নিজেদের সাথে সবসময় রামদা কিরিচসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত থাকায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতেও ভয় পান। যারা সাহস করে প্রতিবাদ করেন তাদের মাসুক চৌধুরীর পরিণতি বরণ করতে হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং এ প্রতিবেদককে বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ আমার কাছে এলেও সরজমিনে তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে প্রমাণ সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, এবার কোম্পানীগঞ্জে গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৮ একরের বেশী বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। এটাকে অনেকে অবৈধ মনে করছে। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রমাণ পেলে অবশ্যই আমরা তাৎক্ষনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শেয়ার করুন