বিএনপি বর্জন করলেও সিলেটে ভোট দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা

সিলেট

ডেস্ক রিপোর্ট : বর্তমান সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের অংশ হিসেবে জেলা পরিষদ নির্বাচনেও কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা আছে দলের। তার পরও সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেট সিটি মেয়র সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সহ বিএনপিে একাধিক পদদারী নেতাদেরকে ভোট দিতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে দলটির তৃণমূলের নেতা্কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গতকাল সোমবার নগরীর মদনমোহন কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন মেয়র আরিফ সহ বিএনপির একাধিক নেতা।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ও কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। শুধু মহানগরীতেই নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপিপন্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, পৌরসভার কাউন্সিলর এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদেরও ভোট দিতে দেখা যায়।

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার ঘোষনা দেয়ার পরও ভোট দেয়া প্রসঙ্গে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। ফলে এটা সিলেকটেড ভোটারদের ভোট, পাবলিক ভোট নয়। তাই তিনি ভোট দিয়েছেন।

মহানগর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ও কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আমার দল ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিরুদ্ধে। যেহেতু একটা সুযোগ পেয়েছি, তাই ইভিএম দেখতে গিয়েছিলাম। কী প্রক্রিয়ায় কারচুপি হতে পারে, সেটা দেখার জন্যই গিয়েছি। এটা টাইম কিলিং মেশিন। এ প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগে। এটা হয়রানি ও বিরক্তিকর।

স্থানীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিলেটে যেসব নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তবে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করে জয় পেয়েছিলেন। বিএনপি যেখানে নির্বাচন বর্জন করেছে, সেখানে তাঁর ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। একইভাবে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির পদধারী নেতাদের ভোট দেওয়া ঠিক হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, নির্দলীয় সরকার দাবিতে ও ইভিএমের বিরুদ্ধে আমরা সভা, সমাবেশ করছি। এসব সভা-সমাবেশে যেসব নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইভিএমেই ভোট দিলেন। যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি, তাঁদের এই দ্বৈত আচরণ তৃণমূলে বাজে একটা বার্তা ছড়াল।

জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি, সিলেট মহানগর ও জেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোটার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক পদধারী নেতাও জনপ্রতিনিধি হিসেবে আছেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকি বলেন, বিএনপি যেখানে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করেছে, সেখানে দলীয় নেতাদের প্রার্থী হওয়া বা ভোট দেওয়া—কোনোটাকেই আমরা উৎসাহিত করি না। আমার দৃষ্টিতে, দলীয় ব্যক্তিদের এ নির্বাচনে ভোট দেওয়া উচিত হয়নি।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপি সব নির্বাচন বর্জন করে এক দফা আন্দোলন করছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে দলের। এখন কেউ কেউ যদি ভোট দিয়ে থাকে, সেটা বিচ্ছিন্ন বিষয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *