বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক টিএসসিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী '৩৬ জুলাই' কর্মসূচিতে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ অন্যান্য কয়েকজন জামায়াত নেতা, যারা শেখ হাসিনার আমলে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের ছবি বাম সংগঠনগুলোর তোপের মুখে সরানো হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এরই মাঝে, বাম সংগঠনগুলোকে ‘শাহবাগ’ এর সঙ্গে যুক্ত করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান।

তিনি বলেছেন, বিচারিক হত্যাকান্ড শাহবাগ এবং আওয়ামী যৌথ প্রজেক্টের ফল। যে, যারা, যেভাবেই ফ্যাসিবাদের ভিক্টিম হয়েছে আমরা তাদের কথা বলবোই। শাহবাগের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম জারি থাকবে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে মহিউদ্দিন বলেন, ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ফ্যাসিবাদ পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত চিত্রপ্রদর্শনীতে প্রদর্শিত বিচারিক হত্যাকান্ডের শিকার জাতীয় নেতৃবৃন্দের ছবি সরিয়ে নিতে প্রশাসনকে বাধ্য করেছে শাহবাগ যা আওয়ামী রেজিমের ফ্যাসিবাদকে দীর্ঘ জীবন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃংখলার স্বার্থে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, তবে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। বিচারিক হত্যাকান্ড শাহবাগ এবং আওয়ামী যৌথ প্রজেক্টের ফল। যে, যারা, যেভাবেই ফ্যাসিবাদের ভিক্টিম হয়েছে আমরা তাদের কথা বলবোই। শাহবাগের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম জারি থাকবে ইনশাআল্লাহ।

মহিউদ্দিন খান আরও বলেন, যারা বিচারিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, যারা এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, যারা হাসিনাকে হাসিনা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, সবার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

এছাড়া, এদিন রাতেই ঢাবি শিবিরের প্রচার সম্পাদক মু. সাজ্জাদ হোসেন খাঁন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শান্তিপূর্ণ জুলাই আয়োজনে বামপন্থি গোষ্ঠী কর্তৃক পরিকল্পিত মব তৈরি করে ছাত্রশিবিরের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও ক্যাম্পাসকে অশান্ত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়, কিছু বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করতে মব সৃষ্টি করেছে এবং অশালীন আচরণ প্রদর্শন করেছে। আমাদের বক্তব্যে কিছু মহল, বিশেষ করে শাহবাগ ঘরানার তথাকথিত বাম চেতনাধারীরা অস্বস্তি বোধ করেছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, তারা এই ‘মব জাস্টিস’-এর প্রবর্তক, যারা ২০১৩ সালে বিচারের নামে শাহবাগ চত্বরকে রায় ঘোষণার মঞ্চে পরিণত করেছিলো। তারা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল—যা আয়নাঘর, গুম, ক্রসফায়ার, এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বীজ রোপণ করেছে। শাহবাগের প্রজন্ম কখনোই আইনের শাসনে বিশ্বাস করেনি। তারা আইনকে মাথা নত করতে চেয়েছে মব তৈরি করে। তারা নিজেরা কখনোই সেই বিচারকে আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখায়নি—বরং ‘রাজাকার’ তকমা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই ছিল তাদের একমাত্র রাজনীতি। তারা আজও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য বর্ণচোরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু তারা জানে না—জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সেই ফ্যাসিবাদকে ইতিহাসের গর্তে ছুঁড়ে ফেলেছে। আর তাদের বিভাজনের রাজনীতিও আজ ইতিহাসের জঞ্জাল।

এতে আরও বলা হয়, আমরা ‘৩৬ জুলাই’ কর্মসূচির মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া সকল হত্যাকাণ্ড, দমনপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রদর্শনীটি তারই প্রতীকী উপস্থাপন। কিন্তু সেটাকে বাধাগ্রস্ত করার মধ্য দিয়ে বামপন্থী সংগঠনগুলো সকল বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সর্বোপরি ফ্যাসিবাদ পতনের এই ঐতিহাসিক দিনে যারা ৩৬ জুলাই উদযাপনকে বিতর্কিত করতে চায়, ছাত্রশিবির মনে করে এটা কেবল একটি অযুহাত মাত্র। তাদের এজেন্ডা ভিন্ন। তারা ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন, বিচারিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া এবং আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।