বিপদে ঢাবি ছাত্রলীগের ৬০০ নেতা-কর্মী, অ্যাকাডেমিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

জাতীয়

বিপদে পড়তে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রলীগ শাখার বিভিন্ন ইউনিটে অন্তত ৬০০ নেতা-কর্মী। তাদের অনেকেরই অ্যাকাডেমিক ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ক্লাসরুম এবং আবাসিক হল থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তাদের।

জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যারা আন্দোলনে সরাসরি হামলায় জড়িত, যারা হামলাকে সমর্থন করেন এবং যারা আন্দোলনে নীরব ভূমিকা পালন করেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, আবাসিক হলগুলোতে এ নেতাকির্মীদের জন্য আসন বরাদ্দ না করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাঝে দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্রে তাদের সঙ্গে না বসার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে ছাত্রলীগের অনেক নেতা ক্যাম্পাসে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ারও আশঙ্কা করছেন।

অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা নেতাকর্মীদের মধ্যে বিজয় একাত্তর হলের অন্তত ১৬৫ জন, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ৫৯, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৫৮, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ৫১, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৩৯, স্যার এ এফ রহমান হলের ৩৫, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৫, কবি জসীম উদদীন হলের ২৫, ফজলুল হক মুসলিম হলের ২৫ ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ২০ জন এবং পাঁচটি ছাত্রী হলের অন্তত ৪০ জন রয়েছেন।

এ তালিকায় নেই জগন্নাথ হলের অবাঞ্ছিত নেতা-কর্মীদের তথ্য। ছাত্রলীগের ৬০০ নেতা-কর্মীর মধ্যে অন্তত ১৮০ জন স্নাতকোত্তর এবং ১৩০ জন স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারেরও দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা তদন্তে একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যারা জুলাই অভ্যূত্থানে বিভিন্ন ভাবে ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা চিহ্নিত হবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাস্তির আওতায় আসবেন। পাশাপাশি ফৌজদারি শাস্তির আওতায়ও আসবেন। পাশাপাশি যারা জড়িত না, তাদের পড়ালেখার অধিকার তো আমরা কেড়ে নিতে পারি না।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানেও ছাত্রলীগ ছাত্রদের ওপর কীভাবে নির্যাতন করেছে, তা সবাই দেখেছে। তারা যেভাবে অস্ত্রের ব্যবহার করেছে, তাদেরকে আমরা সন্ত্রাসী সংগঠনই মনে করি।

তিনি আরো বলেন, পরিচয়ে সে শিক্ষার্থীও হতে পারে, হুজুরও হতে পারে আবার অন্য কোন পেশায়ও থাকতে পারে। তারা যে লেবাসই ধারণ করুক না কেন, সন্ত্রাসীর পরিচয় সন্ত্রাসী হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ১৫ বছর যারা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদন্তও নিশ্চিত করতে হবে।

নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে বাকের বলেন, তারা যেহেতু একটা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, আমি মনে করি তাদের সংগঠন থেকে ঘোষণা দিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। সামাজিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারটি আমাদের কানে আসেনি।

তিনি বলেন, যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক ছাত্রলীগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে কোনো ভয় দেখিনি। যারা হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল না, তাদের তো অন্যদের দ্বারা নিপীড়নের ভয় থাকার কথা না। যারা হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের মধ্যে সে হীনমনত্যা থাকাটা স্বাভাবিক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *