রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’, ‘কবিগুরু’ ও ‘বিশ্বকবি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়।
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে।
শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন শেকসপিয়র ও অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে।
তার সর্বমোট লেখার সংখ্যা- ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ, ৯৫টি ছোটগল্প, ১৯১৫টি গান, ২০০০ চিত্রকর্ম। তার শ্রেষ্ঠ কর্ম- ছোটগল্প: কঙ্কাল, নিশীথে, মণিহারা, ক্ষুধিত পাষাণ, স্ত্রীর পত্র, নষ্টনীড়, কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, দেনাপাওনা।
কবিতা: সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, কল্পনা, ক্ষণিকা, অক্ষমা, অঙ্গের বাঁধনে বাঁধাপড়া আমার প্রাণ, অচল স্মৃতি। কাব্যগ্রন্থ: কবি-কাহিনী, বনফুল, ভগ্নহৃদয়, সন্ধ্যা সঙ্গীত, প্রভাত সঙ্গীত, ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মানসী, গীতাঞ্জলি। উপন্যাস: ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট, রাজর্ষি, চোখের বালি, নৌকাডুবি, প্রজাপতির নির্বন্ধ, গোরা ইত্যাদি।
রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য কিছু গান- আমারো পরানো যাহা চায়, চোখের আলোয় দেখেছিলেম, জগৎ জুড়ে উদার সুরে, ওগো দখিন হাওয়া, দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে, কান্না হাসির দোল দোলানো, কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া, কণ্ঠে নিলেম গান, কবে আমি বাহির হলেম, কি গাব আমি কি শুনাব, তুমি কোন কাননের ফুল, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে, জাগরণে যায় বিভাবরী, তোমার খোলা হাওয়া ইত্যাদি।
তার রচিত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত শ্রীলঙ্কা মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে লেখা হয়েছে।
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি এশীয়দের মধ্যে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, রবীন্দ্রসদন এবং অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থাপনা। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
শেয়ার করুন