সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া ও তার পিএস দবির মিয়ার বিরুদ্ধে একদিনে আরও দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারি বরাদ্দের নামে এক দরিদ্র রঙ মিস্ত্রি এবং এক দিন মজুরের নিকট থেকে পৃথকভাবে ৪০হাজার টাকা নিয়ে বরাদ্দ ও টাকা কোনটাই না দেওয়ায় আদালতে মামলা করেছেন দুই ভূক্তভোগী।
ওই দুই মামলাসহ মোট ৮টি মামলায় অভিযুক্ত হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া আর ৭টি প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত হলেন তার পিএস দবির মিয়া।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট প্রথম আদালতে তারা পৃথক দু’টি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। তবে, ওইদিন মামলাটির শুনানী হয় সনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ২য় আদালতে। শুনানী শেষে আদালতের বিচারক দিলরুবা ইয়াসমিন মামলা দু’টি তদন্ত করে আগামি ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে বিশ^নাথ থানার তদন্ত ওসিকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
মামলার বাদী দু’জনের একজন হলেন, দরিদ্র রঙমিস্ত্রি দিলোয়ার হোসেন (৩৫)। তিনি উপজেলার লামাকজি ইউনিয়নের খোজারপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। তার দায়ের করা ‘বিশ^নাথ সিআর মামলা নং ৩৫৬/২০২৩ইং’।
আর মামলার অপর বাদী হলেন, দিনমজুর সামছুল ইসলাম (৪৪)। তিনি একই ইউনিয়নের সাহেব নগর (খোজারপাড়া) গ্রামের আব্দুল মুকিতের ছেলে। তার দায়ের করা ‘বিশ^নাথ সিআর মামলা নং ৩৫৭/২০২৩ইং’। পৃথক মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়ার পিএস দবির মিয়াকে। অভিযুক্ত দবির মিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য ও মিয়াজানেরগাঁও গ্রামের সাজিদ মিয়ার ছেলে।
রঙমিস্ত্রি দিলোয়ার হোসেন তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, দবির মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে লামাকাজি বাজারে দীর্ঘ সময় কথা হয় দিলোয়ার হোসেনের। এরপর প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি গভীর নলকূপসহ ওয়াশ ব্লক দেওয়া হবে বলে প্রলোভন দেখান দবির। তবে, বরাদ্দ পেতে হলে ২০হাজার টাকাও দিতে হবে বলে জানান দবির। এসময় রঙমিস্ত্রি দিলোয়ার হোসেন তার ৮বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে ওলিউর রহমানের জন্য একটি ওয়াশ ব্লক চান। এরপর দবিরের কথামতো ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি টাকা আনতে রঙমিস্ত্রির বাড়িতে যান দবির।
এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সামনে দবিরকে নগদ ২০হাজার টাকা দেন রঙমিস্ত্রি দিলোয়ার হোসেন। টাকা দেওয়ার দীর্ঘদিনেও বরাদ্দ না পাওয়ায় গত ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় বিশ^নাথ উপজেলা পরিষদে গিয়ে না পেয়ে বিকেল ৪টায় দবির মিয়ার বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত চান রঙ মিস্ত্রি দিলোয়ার। এসময় দবির মিয়া তাকে হুমকি দিয়ে বলে তোর টাকা উপজেলা চেয়ারম্যানকে দিয়েদিছি। আর কোনদিন টাকা চাইলে তোকে জ্যান্ত রাখবো না। হুমকির বিষয়টি স্থানীয় বশিরপুর গ্রামের সমর আলীর মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়াকে জানিয়ে টাকা চাইলে নুনু মিয়াও তাকে পাল্টা হুমকি দেন এবং আর কোনদিন টাকা না চাইতে বলেন।
একইভাবে মামলার অপর বাদী দিনমজুর সামছুল ইসলাম তার মামলায় উল্লেখ করেছেন, দবির মিয়ার প্রলোভনে গভীর নলকূপসহ ওয়াশ ব্লকের জন্য তিনিও ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তার নিজ বাড়িতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে দবির মিয়াকে নগদ ২০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও টাকা ও বরাদ্দ না পেয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদে গিয়ে না পেয়ে বিকেলে দবির মিয়ার বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত চান রঙ মিস্ত্রি দিলোয়ার। এসময় দবির মিয়া তাকে হুমকি দিয়ে বলে তোর টাকা উপজেলা চেয়ারম্যানকে দিয়েদিছি। আর কোনদিন টাকা চাইলে তোকে দুনিয়াতে রাখবো না। একইভাবে টাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়াও।
মামলায় আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া বলেন, এবিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। আর তাকে (উপজেলা চেয়ারম্যান) না জানিয়ে দবির মিয়াকে কেন টাকা দেন এমন প্রশ্নও তার।
এপ্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট সুমন পারভেজ ও বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল আহমদ বলেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক দিলরুবা ইয়াসমিন আগামি ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে বিনাথ থানার তদন্ত ওসিকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
শেয়ার করুন