স্টাফ রিপোর্টার
গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে তৎকালীন সরকারের পতনের পর সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর ও সরকারি অস্ত্র-গুলি’সহ মালামাল লুট এবং থানায় উপস্থিত থাকা পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করে ত্রাসের সৃষ্টি করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আড়াই হাজার ব্যক্তি অভিযুক্ত করে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারী) থানার এসআই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে’ বিশ্বনাথ থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা নং ৩ (তাং ৯.০২.২০২৫ইংরেজী)। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বাদী থানায় দায়ের করা নিজের লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন।
বাদীর লিখিত অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বিকাল ৩.১০ ঘটিকার দিকে সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে তৎকালীন সরকার পতনের খবরে বিশ্বনাথ থানা সংলগ্ন বাসিয়া ব্রিজ ও তাহার আশপাশ এলাকায় অনুমান ২,০০০/২,৫০০ জন লোক আনন্দ মিছিল শুরু করে। আনন্দ মিছিলে ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকলে আনন্দ মিছিলে থাকা লোকজন থানার প্রধান ফটকের দিকে আসতে থাকে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত ও তাহার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা থানার প্রধান ফটকে মানবঢাল তৈরী করে থানার নিরাপত্তা’সহ থানাকে রক্ষা করার চেষ্ঠা করতে থাকেন এবং নেতৃবৃন্দ বাসিয়া ব্রীজে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে থানা অভিমুখে আগত উশৃঙ্খল জনতাকে থানায় আক্রমন করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। তথাপি বিকেল ৪.৫৫ ঘটিকার দিকে থানার প্রধান ফটকে মানবঢাল তৈরী করে থাকা নেতাকর্মীদের হটিয়ে থানার প্রধান ফটক ভেঙ্গে অনুমান ২,০০০/২,৫০০ জন উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীরা থানার কম্পাউন্ডে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র’সহ প্রবেশ করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এরপর উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীরা থানার অফিসার-ফোর্সদের উপর হামলা করে। উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীদের হামলায় আহত হন থানার এসআই আমিরুল ইসলাম, এএসআই লুৎফুর রহমান, কনস্টেবল সেলিমুজ্জামান সেলিম, কয়েছ আহমদ, জরিপ মিয়া, মারাজ মিয়া, পারভীন আক্তার, মোছাঃ নাছিমা আক্তার, মোছাঃ ফারজানা আক্তার গণ।
উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীরা থানায় ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুট করাকালে- সরকারি ডাবল কেবিন গাড়ী ‘রেজিঃ নং ঢাকা মেট্টো-ঠ ১৪-৪২০৭’ ভাংচুর করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ও ‘রেজিঃ নং ঢাকা মেট্টো-ঠ ১৩-১৪২১’ গাড়ী ভাংচুর করে এবং ১টি সরকারি লেগুনা সিঙ্গেল ক্যাবিন পিকআপ গাড়ী (চেসিস নং ০০২১৮৬) ভাংচুর করে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার, অফিসার ইন-চার্জ (ওসি)’র অফিস কক্ষ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)’র অফিস কক্ষ, ডিউটি অফিসারের কক্ষ, এসআইদের অফিস কক্ষ, জুনিয়র সেরেস্তার অফিস কক্ষ, কম্পিউটার অপারেটরদের অফিস কক্ষ ভাংচুর করে ১০ লক্ষ টাকার এবং ডিউটি অফিসার ও কম্পিউটার রুমে রক্ষিত ৪টি কম্পিউটার, ২টি প্রিন্টার, ৪টি ইউপিএস, ৪টি কম্পিউটার টেবিল ভাংচুর করে ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলায় আরোও ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে। এছাড়া ওয়ার্লেস অপারেটরের অফিস কক্ষে থাকা ২টি ওয়াকিটকি মোটরওয়ালা সেট ও ৪টি ব্যাটারি লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া প্রায় ২ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। থানার অফিসার- ফোর্সদের ব্যবহৃত সরকারি-ব্যক্তিগত মালামাল এবং ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যদের ট্রাংকের তালা ভেঙ্গে নগদ টাকা’সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ও খাবারের চাল, ডাল, মাছ, মাংস লুট করে নিয়ে যাওয়ায় ৩ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। থানায় কর্মরত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সদের ব্যক্তিগত মোটর সাইকেলের মধ্যে ১২টিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সম্পূর্ন বিনিষ্ট করে ফেলে ও আরোও ১০টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। এছাড়া থানায় থাকা জব্দকৃত টিউবওয়ে, লোহাড় তৈরী বডি যান, হায়েচ, টাটা সিংগেল কেবিন পিকআপ, ভারতীয় চিনি ভাংচুর-লুট করে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীরা।
ওই দিন উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীরা থানার ভিতরে হামলা চালিয়ে কনস্টেবলদের কাছে থাকা ৪টি শর্টগান, ১২ বোর রাবার (শর্টগান) কার্তুজ ৫৫টি, ১২ বোর লিড বোর শর্টগানের শিসা ৫০টি, গ্যাসগান ৩৮ এমএম টিআর গ্যাসশেল (শর্টরেঞ্জ) ১০টি এবং ৭.৬২ এমএম চায়না রাইফেলের গুলি ৫ রাউন্ড, হ্যাভারসেকি ৪টি, এ্যামোনেশন ভেষ্ট ২টি, গ্যাস মাস্ক ২টি, বান্ডুলিয়ার ৮ টি জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এর পাশাপাশি উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীরা ৪টি চায়না ৭.৬২ রাইফেলের বাট-ম্যাগজিন ও ১টি শর্টগানের জয়েন্ট ভেঙ্গে ফেলে। ভেঙ্গে ফেলা ও লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলির মূল্য তালিকা না থাকায় লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলির মূল্য লিখিত এজাহারে উল্লেখ করতে পারেননি বাদী। এছাড়া থানার বিভিন্ন স্টোর রুমে জমা থাকা পুলিশ অফিস স্টোক ও রিজার্ভ অফিস স্টোক’র ইস্যুকৃত মালামালের মধ্যে আসামীর রশি ২৮টি, রিফ্লেক্টিং ভেষ্ট ৪৩টি, ট্যানেল ১টি, রিচার্জেবল টর্চ লাইট ১২ টি, সাসফেনশন এ্যালুমিনিয়াম ১টি, পুলিশ ব্যাটন ৫২টি, ডেকসি ১টি, হেভি ডিউটি টর্চ লাইট ৪টি, বেতের লাটি ৫৯টি, পলিকার্বনেট ঢাল ২টি, হেলমেট ২৮টি, লেগ গার্ড ৩০টি, হাতকড়া ১৪ জোড়া, ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট ৯ টি, এক্সপেন্ডেবল ব্যাটন ৭টি, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ৩৭টি উশৃঙ্খল দুস্কৃতকারীরা লুট করে নিয়ে গেছে বলে বাদী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
বর্ণিত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা, থানার কম্পিউটার ও ইন্টানেট সংযোগ না থাকায় এবং দৃষ্কৃতকারিদের কর্তৃক অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাটের মালামাল হিসাব করে ও ঘটনার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে অনুমতি সাপেক্ষে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার এসআই নুর মিয়া বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্তের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।