বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ

সিলেট

ফারুক আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধর্মদা গ্রামস্থ ‘জাগরণ উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্ভট’ দাবী করে এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। মেয়রের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয় পরিচালনা (ম্যানেজিং) কমিটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় এলাকাবাসী অভিযোগ করেন এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার ফসলকে নিজের নামে ছিনতাই করতে যাচ্ছেন পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান। ১৯৯০ সালের ১লা জানুয়ারী এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘জাগরণ উচ্চ বিদ্যালয়’টি মুহিবুর রহমান ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন দাবী করে এবং প্রতিষ্ঠানের ভূমিদাতা শহীদ আইয়ুব আলী ও বিদ্যালয়ের নামকরণকারী অ্যাডভোকেট শাহ মুদাব্বির আলী মানিক মিয়াকে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুধীতাকারী উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়ে এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার ফসল পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান নিজের নামে ছিনতাই নয়, দিনে দুপুরে ডাকাতি করার চেষ্টা করছেন। আর ভুমিদাতার নাম ফলককে সনাতন ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় মন্দিরের সাথে তুলনা করে নিজেকে একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করেছেন, নিজের পৈশাচিক আনন্দ লাভের জন্য সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মনোভ‚তিতে আঘাত দিয়েছেন।

প্রতিবাদ সভা জাগরণ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা (ম্যানেজিং) কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য সাহিদুল ইসলাম সাহিদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ ও জাগরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ রহিম।
প্রতিবাদ সভায় লিখিত বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ রহিম বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর মেয়র মুহিবুর রহমান হঠাৎ করে আমাদের বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে তার ফেসবুক পেইজে লাইভ ভিডিও’র মাধ্যমে মিথ্যা, উদ্ভট, বানোয়াট কথা প্রচার করেন। তিনি বলেন ১৯৮৫ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন বলে দাবি করেন। তার উন্নয়ন ছিনতাই করা হয়েছে বলে লাইভে এলাকাবাসীকে নিয়ে নানা কটুক্তি করেন। বিদ্যালয়ে থাকা ভূমি দাতার নাম ফলকটি সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের উপাসনালয় মন্দিরের সাথেও তুলনা করেন।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ১৯৮৫ সাল নয় প্রকৃত পক্ষে ১৯৯০ সালের ১লা জানুয়ারী পাশ্ববর্তি ধর্মদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ক্লাস শুরুর মাধ্যমে জাগরন উচ্চ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। আর সেই ক্লাস উদ্বোধনের দিন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি (মুহিব) এবং তৎকালীন শিক্ষা অফিসার উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তার পক্ষ থেকে অথবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলে কোন অনুদানই পাওয়া যায়নি। অথচ তিনি এলাকার বহু আকাঙ্কিত এই ফসলকে নিজের নামে নেয়ার হীন চেষ্ঠা করছেন। তার এমন হীন চেষ্ঠাকে এই জনপদের মানুষ কখনো পুরন হতে দেবেনা বলে হুশিয়ারি দেন।
এসময় এলাকাবাসী ময়র মুহিবুর রহমাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ১৯৮৫ সালে এই এলাকায় জাগরণ উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন তার প্রমাণ দিতে পারলে আমরা এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়রের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবে। নতুবা মেয়র মুহিবুর রহমান এমন এমন মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্ভট বক্তব্যের জন্য এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে উনার ফেসবুক পেইজ থেকে ভিডিওটি অপসারণ করবেন।
প্রতিবাদ সভায় লিখিত বক্তব্যে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানে ওই ভিডিওতে ‘আমার জীবন, আমার কথা’ গ্রন্থের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে একই এলাকার মিজানুর রহমান সেলিম আপত্তিকর ভাষায় শাহ ফারুক আহমদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আক্রমণ করে কথা বলেছেন। যা কোনো সুস্থ মস্তিস্কের মানুষের কাজ হতে পারে না। এছাড়া মিজানুর রহমান সেলিম মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছেন, শাহ আজমত আলীকে (রহঃ) নাকি শাহ মঞ্জুর আলী থাকার জন্যে আশ্রয় দিয়েছিলেন। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, শাহ আজমত আলীর (রহঃ) যখন আগমন ঘটে, তখন শাহ মঞ্জুর আলীর জন্মই হয়নি। সেলিম যখন ওই আপত্তিকর ও মিথ্যা কথা বলছিলেন, সেই সময় তাকে থামিয়ে না দিয়ে একই এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ আবদুল গফ্ফার উমরা মিয়া আরও বিভিন্ন বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। মেয়রের কথাবার্তার সময়ও তিনি সেগুলো শতভাগ সত্য বলে সম্মতি জানিয়ে তোষামোদকারীর চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। আবদুল গফ্ফার উমরা মিয়া যদি সঠিক পথে চলতেন, তাহলে তার স্থান আজ অনেক উপরে থাকত।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, সঠিক তথ্য উদঘাটনে যদি কারও গাত্রদাহ হয় তাহলে সেটা অশুভনীয়।
প্রতিবাদ সভায় এলাকাবাসীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজী নোয়াব আলী, হাজী মাসুক মিয়া, গোলাম রব্বানী, ফখর উদ্দিন, আবদুল জলিল হিরন, জামাল আহমদ, সুজন মেম্বার, ইসমাঈল আলী, আবদুল মান্নান রিপন, নাজিম উদ্দিন রাহিন মেম্বার, তানভীর আহমদ মেম্বার, নেছার মিয়া, জুবেল মিয়া, নূর আলী, ফারুক মিয়া, মনির মিয়া, রুহেল আহমদ, ফারুক মিয়া, ফেরদৌস মিয়া, আজাদ মিয়া, ফরিদ মিয়া, সফিক মিয়া, আবদুস সামাদ, গৌছ আলী, আবুল কাশেম, আফজাল আহমদ সায়েম, শাহ মুহিত, শাহ রিমু, শাহ সাইদুল ইসলাম সুজা, শাহ রুপন, শাহ অপু, শাহ ইফতেখারুল ইসলাম রাজু, মুজিবুর রহমান মঞ্জু, তামিম আহমদ, আতিক আহমদ, সুশীল দত্ত মন্ডল, হাবিবুর রহমান, ফজর আলী, আখলাছ আলী, আবদুল মালিক, মফিজ আলী, রশিদুর রহমান ফারুক, সফিক আহমদ, নূর আলী, মনির আহমদ, সোনাফর আলী, শরিফুল হক, শাহ বুরহান আহমদ রুবেল, শাহ আতিক আহমদ, আবদুল মুকিদ, জিবান আহমদ, জাকির মিয়া, ইমন মিয়া, সাহেদ আহমদ রুহেল, ফাহিম আহমদ, মারজান আহমদ, শামিম মিয়া, অনি আহমদ, মাহিন আহমদ, শাহজাহান, জুবায়ের আহমদ, তায়েফ আহমদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *