বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে তারুণ্যের ভাবনা

জাতীয়

মনকে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখা জরুরি, কেননা মনই একমাত্র জানালা—যার ভিতর দিয়ে তুমি জগৎ দেখতে পাবে: জর্জ বার্নার্ড শ। কালের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ প্রতিনিয়তই সভ্য হতে সভ্যতর হওয়ার অভিপ্রায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। একুশ শতকের এই সভ্য সমাজেও এখন পর্যন্ত আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন নই অবহেলায় এড়িয়ে যাই আমাদের মনের সহজাত প্রবৃত্তি ও অভিপ্রায়গুলোকে।

মানসিক স্বাস্থ্যে সচেতনতাই বদ্ধমূল ধারণার অবসান:
প্রত্যেক ব্যক্তিরই শারীরিক সুস্থতা যতটা প্রয়োজন তেমনি মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা প্রতিনিয়তই সম্মুখীন হই বিভিন্ন অভিজ্ঞতার। এদের কোনোটা মনে আনন্দ, উৎফুল্লতার সৃষ্টি করে, কোনো ঘটনা আবার মনে বিষণ্নতা, রাগ, অবসাদের জন্ম দেয় তবে সবগুলোই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রতিটি প্রবৃত্তির সাথে ইতিবাচক চেতনার দ্বারা নিজেকে অভিযোজন করে নিতে পারলেই জীবন সুন্দরময় হয়ে ওঠে।

কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আমরা শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা সচেতন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা ততোটা সচেতন নই তাছাড়াও সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও অনেক কুসংস্কার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই মননশীল ও সুস্থ মস্তিষ্ক সমৃদ্ধ  জাতি গঠনের প্রত্যয়ে সমাজে বিদ্যমান এসব কুসংস্কার ও বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। (সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী, নুসরাত জাহান আখন্দ দিনা)।

মানসিক অবসাদই স্বাদহীন করে তুলে জীবন:
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে আবেগীয়, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায়, যা আমাদের জ্ঞান, উপলব্ধি এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটা এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি তার নিজ ক্ষমতা উপলব্ধি করা, জীবনের স্বাভাবিক চাপকে মোকাবিলা করতে সমর্থ হওয়া, উৎপাদনশীল ও ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে পারা এবং তার নিজ পারিপার্শ্বিক ও সমাজে সুন্দর চেতনার ভাবোদয়ে অবদান রাখতে পারার কৌশল আয়ত্তের ধারণা। এটি একইভাবে নির্ধারণ করে যে একজন ব্যক্তি কীভাবে মানসিক চাপ, প্রতিকূল পরিস্থিতি, আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং নিজের সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়িত করে।

 

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক লক্ষণ হল ঘুমে সমস্যা, বিষণ্নতা, ক্ষুধামন্দা, আত্মবিচ্ছিন্নতা (যদিও অন্তর্মুখীতা এবং একাকিত্ব সবসময় অস্বাস্থ্যকর নয়) এবং প্রায়ই বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা। আমরা সর্বদা ইতিবাচক ভাবনা ও প্রতিকূল মুহূর্তে স্থির থাকা ও নিজেকে মানিয়ে নেয়ার দ্বারা নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যটাকে সুস্থ রাখতে পারি। প্রয়োজন হলে পেশাদার সহায়তা নেয়া উচিত। (মো. আরিফুল ইসলাম আকাশ শিক্ষার্থী, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ)

মননশীল জীবনধারার অভ্যাস গড়ে তুলি:
বর্তমান বিশ্বে শিশু থেকে প্রৌঢ় প্রায় সবাই মানসিক সমস্যায় ভোগে। তবে তরুণদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় তাঁদের মধ্যে ভুক্তভোগীর  সংখ্যাটা সিংহভাগ। কারণে-অকারণে হুটহাট অনুভূতির ভিন্নতা, হতাশা, বিষণ্নতা যেন পেয়ে বসেছে তরুণ সমাজকে। যার দরুন সমাজে প্রতিনিয়ত অনৈতিক মূলক কাজ, দুর্নীতি, আত্মহত্যা বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের ১৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশেষ করে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মাঝে এর প্রবণতা বেশি। মানসিক চাপের কারণে শরীরের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে।

যার ফলে অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, পরিপাকে সমস্যা এবং স্নায়ু সমস্যার মত অসুস্থতা দেখা দেয়। আমাদের উচিত এইসব সমস্যা নির্মূলে  মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, সৃজনশীল কাজে যুক্ত হওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পরিমিত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন, বই পড়া ও লেখালেখির প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি, যোগ ব্যায়াম করা, পছন্দের কাজ করা, নিজেকে সময় দেয়া, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-পরিজন পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, সব সময় শিথিল থাকার চেষ্টা করা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা নির্মূল করতে পারি। তাই আসুন একসাথে সচেতনতা সৃষ্টি করি। (ছাবিহা জামান শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম)।

মানসিক চাপ প্রকাশে জড়তা কাটানো প্রয়োজন:
আমাদের সমগ্র জীবন সর্বদা সরলরৈখিক গতিতে মসৃণতায় চলবে সেটা নয়। সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বিষণ্নতা সবগুলো অনুভূতিই স্থান পায় এই মানব হিয়ায়। তবে জীবনের প্রতিকূল অভিজ্ঞতার মুহূর্তগুলোতে কাছের মানুষগুলোর সান্নিধ্য ও সঙ্গ  দ্বারাই অভিযোজনের সক্ষমতা অর্জিত হয় আমাদের। তবে দুঃখের বিষয় হলো  আমরা, আমাদের পরিবার, সমাজ ও পারিপার্শ্বিকের চেতনায় শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি যতটা স্বাভাবিকভাবে উপলব্ধ হয় মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি সেভাবে মেনে নেয়া হয় না।

মানসিক স্বাস্থ্যটাকে অবহেলায় দেখা হয় যার দরুন তা প্রকাশে আমাদের মাঝে অনীহা ও হীনম্মন্যতার জন্ম হয়।  মনের মানসিক চাপ আর বিষণ্নতার মুহূর্তগুলো একা সহ্য করতে হয় । এর ফলেই বাধে বিপত্তি! মনের রোগের কারণেই অনেকে মৃত্যুকে পর্যন্ত বেছে নেয় যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তাই আমাদের মানসিক অসুস্থতা ও চাপ প্রকাশে সংকোচ কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, ও সমাজ সকলেই এ বিষয়ে সংবেদনশীল হওয়া উচিত। (বরকত আলী  শিক্ষার্থী, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর)।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে  শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন- বাঁধন বৈষ্ণব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *