‘বুঙ্গার’ চিনি: এবার আলোচনায় দুই ছাত্রলীগ নেতা

সিলেট

এবার আলোচিত ‘বুঙ্গার’ চিনি নিলামে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসলেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এ দুই নেতার একজন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বাধীন, অপরজন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজান আহমদ পারভেজ। তারা ৩টি চালানে ৮২৯ বস্তায় ৪১ হাজার ৪৫০ কেজি চিনি বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে নিলামে কিনে নিয়েছেন।

বুধবার সিলেট মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক সুমন ভূঁইয়া ৩টি চিনির চালান নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতাদের নামে বরাদ্দ দেন। একই দিনে নিলামে যায় পুলিশের অভিযানে জব্দকৃত ভারতীয় সুপারি, চা পাতা ও প্রসাধন সামগ্রি।

আদালত সূত্র জানায়, মোগলাবাজার থানা পুলিশের জব্দকৃত ৩০০ বস্তা চিনি নিলামে কিনে নেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজান আহমদ পারভেজ। তিনি জানান, ৩০০ বস্তা চিনি ১৫ টন (১৫ হাজার কেজি) চিনি ১১৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়েছেন। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটসহ প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ে  ১২২ টাকা ৫০ পয়সা। সে হিসেবে ১৫ টন চিনির সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। নিলামকালে আদালতে জামানত দিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। তার সঙ্গে আরো ২/৩ জন ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে চিনি কেনার কারণ জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা মিজান আহমদ পারভেজ বলেন, এই প্রথম নিলামে চিনি কিনেছি। দাম একটু বেশি পড়ে গেছে। ক্ষতি মেনে নিয়েই চিনির চালানটি কিনেছি। আদালত থেকে  ৩ কার্যদিবসের মধ্যে চিনি নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ কর্তৃক জব্দকৃত দু’টি চিনির চালান এদিন একই আদালতে নিলামে ওঠে। ২৯৫ বস্তায় ১৪ হাজার ৭৫০ কেজি এবং ১১৭ বস্তায় ৫ হাজার ৮৫০ কেজি  চিনির চালান একাই নিলামে কিনে নেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বাধীন। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটসহ ২৯৫ বস্তা চিনির দাম পড়ে ১৮ লাখ ২১ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১১৭ বস্তা চিনি ৭ লাখ ২২ হাজার ৪৭৫ টাকায় কিনে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বাধীন জানান, নিলামে চিনি তিনি একাই কিনে নিয়েছেন। আদালতে জামানত বাবদ ৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তবে দাম একটু বেশি পড়ে গেছে। নিলামে কেনা চিনির  চালান পাবনায় পাঠিয়ে বিক্রি করবেন, জানান তিনি।

একই দিনে কোতোয়ালি থানা কর্তৃক জব্দকৃত প্রসাধনীর ও ৭ বস্তা সুপারি চালান, শাহপরান থানা পুলিশের জব্দকৃত চা পাতার চালানও নিলামে বিক্রি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর কালিঘাট পাইকারি বাজার কেজি প্রতি চিনির মূল্য পড়ে ১০২ থেকে ১০৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। কিন্তু বাজার দরের চেয়ে অধিক দর দিয়ে নিলামে চিনি নেওয়ার বিষয়টি এখন টক অব দ্যা সিটি।

নেপথ্যে রহস্য উদঘাটনে অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্তে জানা গেছে, বিগত দিনে আদালত থেকে নিলামে নেওয়া চিনির চালানের কাগজ ব্যবহার করা হতো চোরাচালানে। সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা চিনির চালান ধরা পড়লে নিলামের কাগজ তুলে ধরা হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে। অনেকটা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতো এই নিলামের কাগজ। যে কারণে চোরাকারবারিদের কাছে চিনির চেয়ে কাগজের গুরুত্ব বেশি।

এরআগে ৩ জুলাই জালালাবাদ থানা কর্তৃক জব্দকৃত ১৪ ট্রাক ভর্তি চিনির চালান কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি হয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিলামে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দার দিয়ে চিনির চালানটি কিনে নেন নগরীর কালিঘাটের চাল ব্যবসায়ী গিয়াস মিয়া। কিন্তু তাকে সামনে রেখে তৈরী সিন্ডিকেট সদস্যরা নানা অজুহাত দেখিয়ে নিলামে বিনিয়োগ করেননি। যে কারণে গত সোমবার নিলাম বাতিল ও জামানতের টাকা ফেরত পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন।

একাধিক সূত্র জানায়, ৬ জুন জালালাবাদ পুলিশ ১৪ ট্রাকভর্তি চিনির চালান জব্দ করে। বিশাল এই চালানটি ৩ জুলাই সিলেটের আদালতে চড়াদামে নিলামে বিক্রি হয়। সে সময় চিনি নিলামের কাগজ চোরাচালানে ব্যবহারের ঘটনাটি আলোচনায় আসে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। চোরাই চিনির ক্ষেত্রে নিলামের কাগজ প্রদর্শন করলে আটকানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই চোরাই চিনিতে বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। কিন্তু এবার নিলামে চিনি কিনে নিয়ে আলোচনায় আসলেন দুই ছাত্রলীগ নেতা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *