বৃষ্টিভেজা কাঁচা ঘাস খেয়ে অসুস্থ, একে একে ২৮ গরুর মৃত্যু

জাতীয়

নেত্রকোণার পূর্বধলায় উপজেলায় বৃষ্টিভেজা কাঁচা নেপিয়ার ঘাস খেয়ে এক খামার মালিকের এ পর্যন্ত ২৮টি গরু মারা গেছে। এছাড়া খামারটির আরও বেশ কয়েকটি গরু অসুস্থ আছে। কাঁচা ঘাসে থাকা মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেনের বিষক্রিয়ায় গরুর মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা।

গত রোববার থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের তাহাযীদ এগ্রো ফার্মে এই গরু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আকস্মিকভাবে এভাবে গরুর মৃত্যুতে খামার মালিক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খামার মালিকের দাবি, এতে তার প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খামার মালিক জাহেরুল ইসলাম জানান, তার খামারে ২০৩টি গরু ছিল। এর মধ্যে, গত ৫ দিনে ২৮টি গরু অসুস্থ হয়ে মারা যায়। আরও ৫টি গরু অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। অসুস্থ গরুগুলোও মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘গত শনিবার সন্ধ্যায় কাঁচা নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানোর পরেই খামারের গরুগুলো অসুস্থ হয়ে যায়। রোববার থেকে একে একে গরু মারা যেতে শুরু করে। বুধবার পর্যন্ত ২৮টি মারা গরু গেছে। খামারে মারা যাওয়া কয়েকটি গাভী ছিল। আর বাকিগুলো ষাড়। কোরবানির বাজারে বিক্রি জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে আনুমানিক ৬০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। যদি বাকি অসুস্থ ৫টিও মারা যায় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে ৭০ লাখ টাকার মতো।’

২০২০ সালের শেষের দিকে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে খামার চালু করেন জাহেরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনটি শেডে গরু লালন–পালন করছেন। এর মধ্যে একটি শেডের গরু অসুস্থ হয়েছে। এই শেডে ১১০টি গরু ছিল। এর মধ্যে ২৮টি মারা গেছে। আরও ৫টি অসুস্থ আছে। বাকিগুলোর তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। এবার কোরবানির জন্যে গরু মোটা-তাজা করতে বেশ কিছু টাকা ঋণও নিয়েছিলেন জাহেরুল। আর যে ষাঁড়গুলো মোটা-তাজা করেছিলেন ওই গরুগুলো এই শেডে ছিল। অসুস্থ হয়ে এই গরুগুলোই মারা গেছে। অন্য শেডে যে গরু রয়েছে সেখানে বেশিরভাগই বাছুর গরু।

যে গরুগুলো অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে এর লক্ষণ দেখে চিকিৎসকেরা বলছেন, ঘাসের বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন। দেখভাল করছেন। কিন্তু তারপরও গরুগুলো মারা যাচ্ছে। সঠিক কারণ জানতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা আলামত ঢাকায় পাঠাচ্ছেন।

‘আমার ঘাম-শ্রম সব দিয়ে খামারটি গড়ে তুলেছি। এবার ঋণ করে কোরবানির জন্যে গরু প্রস্তুত করছিলাম। ভাবছিলাম গরু বিক্রি করে করে ঋণ পরিশোধ করব। সব শেষ হয়ে গেল। এখন কেমনে ঘুরে দাঁড়াব সেই চিন্তায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সরকার যদি কোনোভাবে সহযোগিতা করে তবে আমি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’— বলেন জাহেরুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে পূর্বধলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এম.এম.এ আউয়াল তালুকদার বলেন, ‘বৃষ্টির সময় কচি ঘাসে নাইট্রোজেনের মাত্রা বেশি থাকে। নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় গরুগুলো মারা যেতে পারে। ঘাসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে। এ ব্যাপারে খামারির সাথে যোগাযোগ করে আমাদের মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক খামারের অন্য গরুগুলোর চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে এবং খোঁজখবর রাখছে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *