বৃষ্টি থাকবে ১৫ দিন, সিলেটে বন্যার শঙ্কা

সিলেট

আগামী ১৫ দিন সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যার আশঙ্বকা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা’ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

এরআগে গতবছর সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে তলিয়ে গিয়েছিলা সিলেটের ৭০ শতাংশ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হন নগরের প্রায় সব মানুষ। এছাড়া বৃষ্টি হলেই নগরে জলাদ্ধতা দেখা দেয়। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা। এমন অবস্থায় আবার বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। নগদ টাকাসহ ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ২৭১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।

তবে এখন পর্যন্ত সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিলেটের সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এর মধ্যে ৮ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটারে অবস্থান করেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা ১৩ দশমিক শূন্য সেন্টিমিটার এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ৮ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটারে অবস্থান করে। আর পিয়াইন নদের পানি ১০ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল।

বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন- ‘সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পূর্বাভাস রয়েছে- আগামী ১৫ দিন সিলেটজুড়ে অতিবৃষ্টি হবে। এই কদিনে ১৪ শ মিলিমিটারের বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। এই লক্ষ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) জেলার সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছি। সকলের কাছ থেকে নিজ নিজ উপজেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসক জানান- নদীসংবলিত উপজেলাগুলোর নদীতে গত কয়েকদিনে বেশ পানি বেড়েছে। তবে এখনো বিপদসীমার উপরে উঠেনি। তারা (নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান) জানিয়েছেন, নিজ নিজ উপজেলায় নগদ অর্থ ও চাল মওজুদ রয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। নতুন করে চাহিদা পাঠাতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ মওজুদ রয়েছে। চাহিদামতো উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে।

এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত সরিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকার জন্য সব উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. মজিবর রহমান জানান- গত বছরের বন্যার সময় তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে আবারও প্রস্তুত করা হবে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রের তালিকা নতুন করে তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সিলেট মহানগর এলাকায় নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের জন্য গতবারের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কয়েকটি পরিবর্তন করা হতে পারে।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, ৩-৪ লাখ টাকা করে স্টিলের দুটি বড় নৌকা ক্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। কারণ- গত বছরের দফায় দফায় বন্যায় বড় নৌকার অভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা’য় সিলেটে সিটি করপোরেশন, সিলেট মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিলেটে ভারী বৃষ্টির কারণে সাময়িক পানি জমেছে। তবে নালা-নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে পানি নামার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা বেশি সময় স্থায়ী হচ্ছে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *