দুই কারখানার শ্রমিক ও এলাকবাসীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ৫ জন। এ সময়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা জিরানী বাজারের পাশেই অ্যামাজন নিটওয়্যার নামে আরেকটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বেক্সিমকোর শ্রমিকরা কাছের আরেকটি কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই-কারখানা শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশে আরেকটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে নিরাপত্তার কারণে ফায়ার সার্ভিস এখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, বেক্সিমকো কারখানা শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে গাজীপুর মহানগরীর পানিশাইল এলাকায় ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় দুই কারখানার শ্রমিক ও এলাকবাসীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ৫ জন। এ সময়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা জিরানী বাজারের পাশেই অ্যামাজন নিটওয়্যার নামে আরেকটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্কের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে চতুর্থ দিনের চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে সড়কে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও তাতে কাজ হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আশপাশের অন্তত ২০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া, গত ১ নভেম্বর থেকে পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গত রোববার কারখানা খুলে দেওয়া হলেও দুপুরের পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। সোমাবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা দেখেন ফের তাদের কারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিশ দেখে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভে শুরু করেন শ্রমিকরা।
এক পর্যায়ে তারা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। একই সময়ে ওই সড়কের পৃথক স্থানে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরাও অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ৫ জনকে স্থানীয় ক্লিনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এ সময়ে শ্রমিকরা পানিশাইল ও কলতাসুতি এলাকায় ঢুকে পড়ে এলাকার লোকজনদেরও মারধোর করেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া করে। বেশ কিছু সময় ত্রিমুখী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকোর কিছু উশৃঙ্খল শ্রমিক পূর্ব কলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নীটওয়্যার নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে বলেও জানা যায়। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ঘটাস্থালে উত্তেজনা থাকায় প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেলেও দমকল বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থালে পৌঁছাননি।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসে উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, “খবর পেয়ে কাশিমপুর দমকল বাহিনীর দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সহযোগিতায় আগুন নেভানো হবে।”
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “বিপ্লবদা শ্রমিকরা একটি কারখানায় আগুন দিলে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু উত্তেজিত শ্রমিকদের আক্রমণের ভয়ে তারা এখনো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি।”
শেয়ার করুন