ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে পাঠ্যবই ছিঁড়ে বিতর্কের মুখে পড়েন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। এ ঘটনায় পরই তাকে ক্লাস নিতে নিষেধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে আসিফের এমন কার্যকলাপ নিয়ে কেউ কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করলেও তার পক্ষে কথা বলছেন অনেকেই। আসিফ মাহতাবের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বিজয় বলেন, সপ্তম শ্রেণির বইয়ের শরিফার গল্পের শুরুতেই যদি তার তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হতো, তবে কোনো সমস্যা হতো না। তবে শুরুতে তাকে একটি ছেলে হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এরপর বলা হয় যে, সে মনে মনে নিজেকে একজন নারী মনে করে। এটি মূল সমস্যা। এ নিয়ে আসিফ মাহতাবের প্রতিবাদের ভাষা ভিন্ন হওয়ায় তাকে শোকজ করা যেত। তবে একটি ফোনকলের মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করা উচিত হয়নি বলে দাবি তার।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্টে লিখেন, ট্রান্স মতবাদ বাস্তবায়নে চক্রান্ত করা হচ্ছে। একটা সেমিনারে বইয়ের দুইটা পাতা ছিঁড়ে ফেলার কারণে চাকরি চলে যাবে কেন? ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কেন এই ইস্যুতে কঠিন পদক্ষেপ নিল সেই প্রশ্নও তুলেন তিনি। এ বিষয়ে ইসলামি প্রভাষক এইচএম শফিউল আজম বলেন, ট্রান্সজেন্ডারের এই বিষয়টি ইসলাম সমর্থন করে না। আসিফ মাহতাব উৎসকে চাকরি থেকে বের করার ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করেন তিনি। এদিকে কেউ কেউ আবার ফেসবুকে সপ্তম শ্রেণির বইয়ের ট্রান্সজেন্ডার অধ্যায়ের পৃষ্ঠা ছেঁড়ার ভিডিও আপলোড করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। ওই অনুষ্ঠানে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফি বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস। এ সময় তিনি সপ্তম শ্রেণির ওই বইয়ের মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান।
এরপরই রোববার রাতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আসিফ মাহতাবকে আর ক্লাস নিতে না যাওয়ার জন্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান তিনি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, আসিফ মাহতাব ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তার সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই। ক্যাম্পাসে সবার মাঝে সহযোগিতামূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করে।
শেয়ার করুন