স্বীকৃতি বিশ্বাস স্টাফ রিপোর্টারঃ
যশোর সদর,অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনার ডুমুরিয়াসহ ফুলতলার একাংশে আশির দশকে শুরু হওয়া জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেওয়া যশোর দুঃখ হিসাবে খ্যাত ভবদহের স্থায়ী সমাধানের জন্য ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি যশোর শহরে মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবারও স্মারকলিপি প্রদান করে।
আজ মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বেলা এগারোটায় শুরু হওয়া সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এরপর ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদল ভবদহের অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
কালেক্টরেট চত্বরে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিৎ বাওয়ালী, যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল, শিবপদ বিশ্বাস, অনিল বিশ্বাস, রাশিদা বেগম, রাজু আহম্মেদ, নাজিম উদ্দিন, জিল্লুর রহমান ভিটু, তসলিম-উর-রহমান, হাসিনুর রহমান, আলাউদ্দিন, পলাশ বিশ্বাস, মঞ্জুরুল আলম প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ঠিকাদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ঘের মালিকেরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতি বছর জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা লুটের স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়েছে ভবদহ এলাকায়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন-২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পুরাতন টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেয়। এরপর হঠাৎ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ভবদহ গেটে এসে টিআরএম হবে না এবং ওই বিলগুলোকে জলাভূমি হিসাবে ঘোষণা দেন। তিনি ডেল্টা প্লান-২১০০-এর অজুহাত উত্থাপন করেন। উপস্থিত জনগণের মধ্যে আপত্তি উঠলে তিনি তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণও করেন। প্রকৃত সত্য হলো, ভবদহ এলাকা কখনই জলাভূমি বা জলাশয় ছিল না। এমন তথ্য রাষ্ট্রীয় নথিপত্রেও দেখা যায় না। বরং ডেল্টা প্লান-২১০০-এ ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে।
স্মারকলিপিতে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন- ভবদহ জনপদের ২শত গ্রামের দশ লক্ষাধিক জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একটি কুচক্রী সিন্ডিকেটের লুটপাটের ঘৃণ্য লালসার শিকার হয়ে স্থায়ীভাবে পানিতে তলিয়ে যেতে বসেছে। আর তাই ভবদহ এলাকার জনগণকে রক্ষা করার লক্ষ্যে- ১.ক্রাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে আগামী মাঘী পূর্ণিমার পূর্বে বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু ও ডেল্টা প্লান-২১০০ এর সুপারিশ বাস্তবায়ন, ২. ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার সেচ প্রকল্প ও প্রস্তাবিত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের অবিবেচনাপ্রসূত সেচ প্রকল্প বাতিল, ৩) আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কাজ দ্রুত করণসহ প্রি-ওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক জনসমক্ষে টাঙানো এবং কাজের স্বচ্ছতা নিরূপণে আন্দোলনকারী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীকে সংশ্লিষ্ট করে তদারকি কমিটি গঠন, ৪.জনপদের ফসল, বাড়িঘরসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণসহ কৃষি ঋণ মওকুফ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত,৫. সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান, নদী হত্যা, জনপদের অবর্ণীয় দুঃখ-দুর্দশা, ফসল, বসতবাড়ি ও যানমালের ক্ষয়ক্ষতির সাথে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও ৬. ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে উজানে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে ভৈরব নদের সংযোগের প্রস্তাবিত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিসমূহ বাস্তবায়নে পুর্নবার জোর দাবি জানানোসহ জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে আগামী ২৪ নভেম্বর যশোরে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর জনসভা থেকে উল্লেখিত দাবি সমূহ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা কামনা করেন।
ভবদহ এলাকার প্রাণের দাবিসমূহ যদি দ্রুত বাস্তবায়ন করা না হয় তা হলে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের মানুষের রাস্তায় উঠে প্রতিবাদ করা ছাড়া কোন পথ খোলা থাকবে না।
উল্লেখ্য ক্ষতিগ্রস্ত ভবদহ জনপদের বিপর্যন্ত মানুষ বারবার স্মারকলিপি দেওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় ভবদহ জনপদের জনগণের ভিতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শেয়ার করুন