ভবদহ এলাকায় মৎস্যঘের নীতিমালা বাস্তবায়ন ধরাছোঁয়ার বাইরে

জাতীয়

স্বীকৃতি বিশ্বাস স্টাফ রিপোর্টারঃ

ষাটের দশকে যশোর সদর,অভয়নগর, কেশবপুর, মনিরামপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকার একটি বৃহদাংশের ২৭ টি বিলে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।ফলে কৃষিপ্রধান সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ফসলি জমিতে সোনার ফসল না ফলায় জনজীবনে যেমন নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার বিদিশার নিশা।অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যে ও পরিবেশের উপর ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেয়।ফলে কৃষি প্রধান ভবদহ এলাকার আবাদি জমি দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত থাকায় ২০০৪ সাল থেকে শুরু হয় ঘেরের মাধ্যমে মৎস্য চাষ।যা পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ব্যাপক হারে প্রসারিত হয়।
মৎস্যঘের স্থাপনের ফলে নদ–নদী ও খাল ভরাট হয়ে এসব ঘেরের পানিনিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। ঘের এলাকার সমগ্র অঞ্চল বৃষ্টির সময় প্লাবিত হয়ে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। ঘেরসংলগ্ন নদ-নদীর পাড় ও রাস্তা ভেঙে যায়।
আর তাই পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য রাখতে সরকারি উদ্যোগে ২০১৯ সালে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় মৎস্যঘের স্থাপন নীতিমালা প্রণয়ন করে।নীতিমালা হচ্ছে -১. যত্রতত্র অর্থাৎ সরকারি খাল,সরকারি জমি, নদীর পাড় ও নদীর মধ্যে ঘের স্থাপন করা যাবেন,২.প্রতিটি ঘেরের আয়তন সর্বোচ্চ ১৫ হেক্টর হবে, তবে সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হেক্টর হবে,৩.ঘেরমালিককে ঘেরের চারদিকে নিজ খরচে বাঁধ তৈরি করতে হবে,ঘেরের বাঁধের সঙ্গে সরকারি রাস্তা থাকলে ঘেরের বাঁধের উচ্চতা সরকারি রাস্তা থেকে কম হতে হবে, পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে প্রত্যেক মালিকের ঘেরের বাঁধ বা পাড়ের বারে নূন্যতম আড়াই ফুট জায়গা ছাড়তে হবে অর্থাৎ উভয় ঘেরের পাড়েরমাঝখানে অনূন্য পাঁচ ফুট জায়গা থাকবে যা পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং ঘেরের পাড়ের উপরে নূন্যতম ৩ ফুট চওড়া বাঁধ থাকবে, ৪.সরকারি রাস্তা,স্থাপনা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধকে ঘেরের বাঁধ বা পাড় হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না এবং পানি নিষ্কাশনে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না; ঘেরের চারিদিকে পানি নিষ্কাশনের খালে কচুরিপানা জন্মাইলে ঘের মালিককে স্বউদ্যোগে অপসারণ করতে হবে,৫.মৎস্যঘেরের বাঁধ বা পাড়ে ভাঙন রোধে ঘের মালিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নীতিমালা প্রনয়নের উদ্দেশ্য ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন করে পরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের স্থাপন, সরকারি খাল, নদ–নদী ও জমি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা। কিন্তু গত তিন বছরেও এ নীতিমালার বাস্তবায়ন হয়নি।কিন্তু বিগত বছর গুলিতে ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করলেও ঐ নীতিমালা সমূহ বাস্তবায়নের কোন সদৃশ্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।এমনকি মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এই নীতিমালা বাস্তবায়ন কঠিন বলে মনে করছেন।
এ সম্পর্কে মৎস্যঘের স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান-ভবদহ এলাকায় মৎস্যঘের স্থাপন নীতিমালা বাস্তায়নের উপযুক্ত সময় এখনো আসেনি। মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করে ছেড়ে দিয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করা কঠিন। এটার অনেক স্টেকহোল্ডার আছে। শুধু মৎস্য বিভাগ কিভাবে এটা বাস্তবায়ন করবে ।
উক্ত কমিটির সভাপতি যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন- জনস্বার্থে দ্রুত নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালে মৎস্যঘের নীতিমালা তৈরি হলেও ২০২২ সালের শেষে এসে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন না হওয়ায় যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলাসহ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার দশ লক্ষাধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে এবং সমিতির মাধ্যমে তৈরি মৎস্যঘেরের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে যা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি নেতারা অবহিত হলেও কোন এক অদৃশ্য কারনে নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *