সেলিম মাহবুব, ছাতকঃ
ছাতকে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে অর্ধ শতাধিক বসত ও প্রায় অর্ধ শতাধিক একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদীর তীর সংলগ্ন একটি পাড়ায় বসবাসকৃত মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন বসত ভিটা হারিয়ে হয়ে পড়েছে অস্থিত্বহীন। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়র গিলে খেয়েছে খরস্রোতা বটেরখাল নদী। ফসলি জমি, অগনিত বাঁশ ঝাড় ও গাছ-গাছড়া ইতিমধ্যেই চলে গেছে নদী গর্ভে। নদী ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শতাধিক পাকা-আধাপাকা বাড়ি, মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থপনা। এ ছাড়া আন্তঃ ইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কের আরো প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়ক নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। সড়কটি নদী ভাঙ্গনের শিকার হলে এ সড়ক ব্যবহার করা অন্তত ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে। বর্তমানে প্রতি দিন-রাত নদী ভাঙ্গনের আতংকে কাটে এসব এলাকার মানুষের। স্থানীয়রা জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মুখ হতে বিনোদনগর পর্যন্ত পাকা সড়ক দিয়ে অত্র এলাকার ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। এ সড়ক অন্যান্য সড়কের সাথে সংযুক্ত হয়ে উপজেলা সদর, জেলা ও বিভাগের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে। অপর দিকে গোবিন্দগঞ্জ বাজার ও সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভটেরখাল নামক নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শান্ত থাকলেও বর্ষায় ভটেরখাল নদী ভয়াবহ রূপ ধারন করে। খরস্রোতা ভটেরখাল নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়ে গোবিন্দগঞ্জ বাজার সহ গোবিন্দনগর গ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নদী ভাঙ্গনে ভটেরখাল নদীর মুল চিত্র বলে যায়। গোবিন্দগঞ্জ বাজার হতে গোবিন্দনগর মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা পড়ে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে। ফসলী জমি, অগনিত বাঁশ ঝাড়, গাছ-গাছড়া তলিয়ে যায় নদী গর্ভে। সড়ক সংলগ্ন নদীর তীর এলাকায় যুগ-যুগ ধরে বসবাসরত মুচি সম্প্রদায়ের বসতভিটা কেড়ে নিয়েছে ভটরখাল নদী। ভিটে-মাটি হারিয়ে হত দরিদ্র মুচি সম্প্রাদয়ের ১০-১২টি পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে দিনানিপাত করছে। তাদের অসহায়ত্বে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, স্থানীয় মুজিবুর রহমান সহ এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। সরকারী সহায়তা বঞ্চিত মুচি সম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য সামান্য ভুমি ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এদিকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গোবিন্দনগর মাদ্রাসার সহশ্রাধিক শিক্ষার্থী, গোবিন্দনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরো কয়েক শ’ ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও এলাকার হাজার-হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করছে এ সড়ক দিয়ে। বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের মারাত্মক হুমকীর মুখে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ গোবিন্দনগর গ্রাম। ভটেরখাল নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের হাত থেকে মাদ্রাসা, স্কুল, গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর গ্রাম সহ অত্র এলাকা রক্ষার দাবী তুলেছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি সরকারী সুবিধা বঞ্চিত মুচি সম্প্রদায়ের লোকজনদের পূনর্বাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। বুধবার নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে প্রধান মন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কমনা করে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গোবিন্দনগর গ্রামের মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে যেখানে এখন নদী দেখা যাচ্ছে, এখানে ছিল এলাকার মানুষের ফসলী জমি, বসতঘর ও গাছ-গাছড়া। ভাঙ্গন রোধ না করলে গোটা এলাকা এক সময় নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। গোবিন্দনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস ছালাম আল মাদানী বলেন, নদী ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে পড়েছে দ্বীন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গোবিন্দনগর মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কটি বিভিন্ন অংশে নীচের মাটি সরে গেছে। বিপদজনক অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে এখন যান চলাচল করছে। সড়কটি রক্ষা করা হলেই মাদ্রাসা, স্কুল সহ গোটা এলাকা রক্ষা হবে। ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল বলেন, ভটেরখাল নদীর ভাঙ্গনে ভিটে-মাটি হারা মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রায় অর্ধ কিঃমিঃ পাকা সড়ক চলে গেছে নদী গর্ভে এবং আরো প্রায় অর্ধ কিঃমিঃ সড়ক বিলিন হওয়ার উপক্রম। এ সড়ক সুরক্ষা ও মুচি সম্প্রদায়ের পূনর্বাসনে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃপা দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি। এসময় মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু সালেহ আব্দুস সোবহান, মাওলানা আব্দুল হাকিম, মাওলানা দ্বীন ইসলাম, প্রভাষক মাওলানা মঈনুল হক মুমিন, কাউসার আহমদ, শাহজাহান আলী, মনসুর আহমদ, ছালিক আহমদ সহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।##
শেয়ার করুন