গত মাসের শেষের দিক থেকে দেশজুড়ে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছিল। সিলেটও এর বাইরে ছিল না। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের আগের ১০ দিন শহরে কোনো লোডশেডিংই ছিল না। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ভোটের পরদিন থেকেই শহরে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের সময়ই আলোচনায় উঠে আসে লোডশেডিং। নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একাধিকবার শঙ্কা জানিয়েছিলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত ১৮ এপ্রিল নগরীর বাগবাড়িস্থ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। এ সময় কর্মকর্তারা তাদের ঘাটতির কথা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে জানান।
তখন কর্মকর্তারা জানান, সিলেট মহানগরীতে বর্তমানে প্রতিদিন ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে বর্তমানে ১৩০ থেকে ১৪০ মেগাওয়াট। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
পরে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাথে সাথে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে সিলেটের বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে অনুরোধ জানান।
জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রচণ্ড দাপদাহে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি ও কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সারাদেশে চাহিদামত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ত্রুটি সারিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে পুরোদমে উৎপাদনে নেওয়ার কাজ চলছে তবে সিলেটের বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন দেন মন্ত্রী।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২ জুন নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে সিলেট নগরের লোডশেডিয়ের পরিমাণ কমতে থাকে। গতকাল ভোটের দিন পর্যন্ত সিলেট মহানগরের লোডশেডিং বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় ছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচনের পরদিন সিলেটে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং।
সিলেটে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) মতে, সিলেটে আজ বিদ্যুতের চাহিদা ১৭১ দশমিক ৫ মেগাওয়াট এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ ১১৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সিলেটে জন্য।
তাই এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটে পিডিবি ৫৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করছে যা চাহিদার ৩৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।
নগরের লোডশেডিং নিয়ে উবার ড্রাইভার ও গোয়াইটুলার বাসিন্দা মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘ভোটের আগের কয়েক দিন বেশ ভালোই কেটেছিল। শহরে কোনো লোডশেডিং ছিল না। তবে ভোটের পরের দিন আবার লোডশেডিং শুরু হল। আমাদের ভোট নেয়া হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের বিজয় হয়েছে, এখন আর আমাদের খবর রাখার দরকার তাদের নেই। তাই লোডশেডিং শুরু করেছে।’
শহরের রিকাবীবাজার এলাকার বাসিন্দা তপন মিত্র জানান, সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল। লামাবাজার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রত্যেকবার আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চারবার লোডশেডিং হয়েছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভোলাপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের দিন নগর এলাকাগুলোকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং এখন নির্বাচন শেষ হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
সিটি নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেট মহানগর এলাকায় পর্যাপ্ত লোড সরবরাহ করায় লোডশেডিং কম ছিল। বর্তমানে লোডের পরিমাণ স্বাভাবিক করা লোডশেডিয়ের পরিমান কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। লোড পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিলেট নগরী এলাকায় ৩৩.৮২ শতাংশ লোডশেডিং বাস্তবায়ন করছি।
শেয়ার করুন