ভোট পর্যন্ত মাঠ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ

রাজনীতি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে রাজপথ ফাঁকা ছেড়ে দেবে না আওয়ামী লীগ। শান্তি সমাবেশ, উন্নয়ন শোভাযাত্রা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। রাজধানীসহ সারা দেশেই এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি এবং দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যেহেতু বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে তারা বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে। আমাদের কথা সংবিধান মেনেই নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে হবে। কাজেই নির্বাচন যেন কেউ বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সে জন্য আমরা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব। সব অপশক্তিকে মোকাবিলা করব।’

সংবিধানে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ রয়েছে সংবিধানে। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগও টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে জোর সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতা জানিয়েছেন, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ যেসব উন্নয়ন করেছে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলের এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারাও যাচ্ছেন তৃণমূলে। আওয়ামী লীগ রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে শান্তি সমাবেশ-উন্নয়ন সমাবেশ, বিএনপির সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সমাবেশ করছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও শোভাযাত্রা বের করা হবে। আগামীকাল রাজধানীতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে কৃষক সমাবেশ। ১৯৯৫ সালে বিএনপির আমলে তেল ও সারের দাবিতে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা এবং ২০০৪ সালে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত ২৪ জন কৃষককে হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হবে। কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম আওয়ামী লীগের কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষক সমাবেশ করব। এটা স্মরণকালের সেরা কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশ থেকে ৩ লক্ষাধিক কৃষক রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমবেত হবেন। আমরা কৃষক হত্যার দাবি জানানোর পাশাপাশি কৃষিবান্ধব সরকার আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেব সেই দিন।’ জানা গেছে, কৃষক লীগের সমাবেশ সফল করার জন্য সংগঠনের নেতারা দেশব্যাপী ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আন্দোলনে নেমেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে বিএনপি। তবে উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানও নিয়েছে। নির্বাচনের সময় নির্বাচিত সরকার অর্থাৎ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারই দায়িত্বে থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থান নিয়েই আগামী লীগ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির আন্দোলনকে রাজপথে থেকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী পক্ষের এ আন্দোলনকে মোকাবিলা করে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব অপশক্তিকে মোকাবিলা করব। আর কাউকে আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে দেব না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে রাজপথে সক্রিয় থাকবে আওয়ামী লীগ।

জানা যায়, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটকে নির্বাচনে আনতে সক্ষম হয় সরকার। নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হয়। এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয় ছিল বলে দলের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন। তবে এবারের বাস্তবতা একটু আলাদা বলে তারা মনে করছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন শুরু করে তা সহিংসতায় রূপ নেয় এবং ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি ও বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হবে কি না সে বিষয়টিও অওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতি-নির্ধারকদের চিন্তায় রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায়। তবে যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগও রাজনৈতিকভাবে অবস্থান নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে রাজপথে পরাজিত করেই আমরা আগামী নির্বাচনে বিজয় অর্জন করব। অন্য কোনো পথ এখন নেই আমাদের সামনে।’

দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন  বলেন, বিএনপি ও তাদের দোসররা গণবিরোধী, গণতন্ত্রের হত্যাকারী, দেশবিরোধী শক্তি। অতীতে তারা আগুনসন্ত্রাস, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী তৎপরতা, মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিশ্বাস করা যায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা থাকবে আমাদের। আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *