স্টাফ রিপোর্টার : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। টিলা আর সমতল ৩২০ একর জায়গা নিয়ে এ বিশ^বিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে ছোট-বড় টিলা রয়েছে। এ টিলাগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে গাজি কালুর টিলা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত
এদিকে টিলার জায়গাগুলো নির্জন হওয়াতে সন্ধ্যার আগেই হল কিংবা মূল ক্যাম্পাসে ফেরে আড্ডা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। আবার অনেকে দলবল নিয়ে রাতেও আড্ডা বা পাহাড় বিলাসের জন্য যায় টিলাগুলোতে। এ টিলাগুলোর নির্জনতাকে কাজে লাগিয়ে ছিনতাইয়ের সুযোগ নেন ছিনতাইকারীরা। এতে ক্যাম্পাসের পাশ্ববর্তী টিলারগাঁও, সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে, তার নিয়ে সুড়ঙ্গ করে ক্যাম্পাসে ধূমপান, মাদক সেবন কিংবা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসে বহিরাগতরা। তাতে দিনে বা সন্ধ্যায় যাদের একা পায় তাদের ছুরি বা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল মানিব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে যায়। অনেকে মোবাইল, মানিব্যাগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ছুরিকাঘাত করে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যান ছিনতাইকারীরা।
নির্জন গাজী কালুর টিলা : গাজী কালুর টিলাটি ক্যাম্পাসে অবস্থিত দ্বিতীয় ছাত্রী হল বেগম সিরাজুন্নেসা হলের সম্মুখভাগ থেকে একটু দূরে অবস্থিত। হল থেকে সেখানে যেতে সময় লাগে ৫ মিনিটের মতো। ক্যাম্পাস থেকে হেঁটে গেলে লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। গাজী কালুর টিলাটি মূল ক্যাম্পাস থেকে একটু নির্জন এলাকায় হওয়ায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া অথবা কোনো আয়োজন ছাড়া খুব একটা সেখানে যায় না শিক্ষার্থীরা। দিনের বেলাতেই অনেকটা নীরব থাকে এলাকাটি, সন্ধ্যার পর হয়ে পড়ে পুরো নিস্তব্ধ জনশূন্য। তাতেই ছিনতাই কিংবা যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাতে সাহস পায় ছিনতাইকারীরা।
শাবিপ্রবির মূল ক্যাম্পাস এবং একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল টিলার দিকে না থাকায় সেদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটা কম বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। বুলবুলকেও ছুরিকাঘাত করা হয় এ গাজী কালুর টিলায়। তাকে হত্যার পর আলোচনার তুঙ্গে এ গাজী কালুর টিলা। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এবং টিলার এলাকাগুলোতে শিক্ষার্থীদের কতটুক নিরাপত্তা দিতে পারছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা নিয়ে ওঠেছে প্রশ্ন। টিলাগুলোতে এরূপ অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
টিলারগাঁও এলাকায় বসবাসরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাজী কালুর টিলা বিকেলের পরপরই নির্জন হয়ে পড়ে। এলাকাটি এমনিতেই খুব নীরব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আরো বেশি নীরব ছিল। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মানুষ সেদিক দিয়ে যাতায়াত করে না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াতে নির্জনতা কিছুটা কমলেও আতঙ্ক কমেনি। সেখানে যে কেউ অবাধে বিচরণ করতে পারেন। তাই মেয়েদের সাথে প্রায়ই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ পায় না।
লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই সিসি টিভি ক্যামেরাগুলো সচল এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। অনিরাপদ এবং অন্ধকারচ্ছন্ন স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা দরকার। ক্যাম্পাসের টিলাগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রশাসন তৎপর থাকলে ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কমে যাবে। সেইসঙ্গে নিজেদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বুলবুল হত্যার পর পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যার গাজী কালুর টিলায় ঘুরতে যান বুলবুল ও তার বান্ধবী। পরে সন্ধ্যায় তাদের একা পেয়ে আবুল, কামরুল ও হাসান মোবাইল ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে রক্ত দেখে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, বুলবুল হত্যায় অন্য কোনো কারণ নেই। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এলাকাটি একটু নির্জন। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেখানে যেতে পারি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিরাপত্তা চাইলে আমরা সেখানে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করব।
শাবিপ্রবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত ইবনে ইসমাইল জালালাবাদকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ নির্জন এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা কর্মী এবং সিসিটিভি লাগানো হবে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে লাইটিং, সিসিটিভি ক্যামেরা সচল ও নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানোর বিষয়ে একটা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।