মরতেও পারতেছি না, আর বাঁচতেও না: আন্দোলনে চোখ হারানো শাফিল

বাংলাদেশ

খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল শাফিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দালনের শুরু থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। গত ২ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। খুলনা, ঢাকার একাধিক হাসপাতাল ও চক্ষু ইনস্টিটিউটেও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু বাম চোখে আর আলো ফিরে আসেনি। এখন ডান চোখেও ভালোভাবে দেখতে পারছেন না। এ অবস্থায় নিজের চিকিৎসা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই তরুণ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দালনে আহত হয়ে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের অবস্থা বেশি সংকাপন্ন, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে শাফিল তার কথা ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে না পারলে আমাকে ফাঁসি দিন। সময়ক্ষেপণ আর হয়রানি করাকে পাশে দাঁড়ানো বলে না।’

মঙ্গলবার ( ১৯ নভেম্বর) এক ফেসবুক পোস্টে এমন আকুতি করেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘তার চোখের আকৃতি দিন দিন লক্ষ্যণীয়ভাবে ছোট হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের প্রতি আক্ষেপ, সীসার শর্টগান কাছ থেকে ফায়ার না করে আসলটা ফায়ার করলেন না কেন? মরতেও পারতেছি না,আর বাঁচতেও না। কোথায় আমার বিপ্লব?কোথায় আমার মৃত্যু?’

জানা গেছে, গত ২ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে তীব্র আলোর ঝলখানি অনুভব করেন শাফিল। মুহূর্তের মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায় তার চারপাশ। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর আরও কয়েক জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়। তবে এতে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।

চিকিৎসকরা জানান, ধাতব গুলিটি শাফিলের চোখের কর্নিয়া ভেদ করে রেটিনার পেছনের অংশে গিয়ে বিদ্ধ হয়েছে। গুলিটি এখনও সেখানে রয়েছে। রেটিনার অংশটি চোখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওই স্নায়ুগুলো দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। বাম চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশের দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় শাফিলদের বাড়ি। বাবা ইউনুস আলী খোকন মৎস্য ব্যবসায়ী। মা মাসুমা আক্তার গৃহিণী। তাদের একমাত্র সন্তান শাফিল। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন খুলনার বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটি বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

শাফিলের বাবা ইউনুস আলী জানান, ঢাকা-খুলনা মিলিয়ে ছয়টি হাসপাতালে নিয়েছি। চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে এর চিকিৎসা নেই, সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে গিয়ে চোখ দুটি বাঁচানো যেতে পারে। এজন্য বিপুল অঙ্কের টাকার প্রয়োজন। আমরা পারিবারিকভাবে কিছুটা জোগাড় করার চেষ্টা করছি। কতটা পারবো বুঝতে পারছি না। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তার ছেলের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *