মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ম না মেনে নিজেদের ইচ্ছামতো স্কুলে যাওয়া প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ গত ৬ অক্টোবর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই ১২টি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ইচ্ছামতো স্কুলে যেতেন, ক্লাস শুরু না করে অফিসে খোশগল্পে মেতে উঠতেন। এমনকি স্কুলে নিজেদের সুবিধামতো গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেন তারা। তাদের এমন খামখেয়ালিপনায় শিক্ষার্থীরাও স্কুলে দেরিতে আসছে এবং স্কুলে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রকৃত পাঠদান। গত রবিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে এমন সচিত্র দেখতে পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৌরভ গোস্বামী ও একলাছ মিয়া। এ সময় তারা উপজেলার ২০টি স্কুল পরিদর্শন করে ১২টি স্কুলে শিক্ষক অনুপস্থিতির সত্যতা পান। এ নিয়ে গত ৬ অক্টোবর কালের কণ্ঠের অনলাইনে ‘নিয়ম না মেনে ইচ্ছামতো স্কুলে যান শিক্ষকরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে সমগ্র উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ায় মোট ১৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৌরভ গোস্বামী বলেন, ছয়টি ক্লাস্টারের মধ্যে সোমবার আমীর ছলফু স্কুলে তিনটি ক্লাস্টারের ৮৬টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার মিটিং করা হয়েছে। এ সময় ইউএনও স্যার সব শিক্ষককে সতর্ক করলে সব শিক্ষক প্রতিজ্ঞা করে বলেন যে তারা সময়মতো স্কুলে যাবেন, পাঠদান শুরু করবেন, শিক্ষার্থীদেরও সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত করার বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করবেন। তিনি আরো বলেন, আজ মঙ্গলবার উপজেলার বাকি তিনটি ক্লাস্টারের ১০৭টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার মিটিং করা হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা বলেন, গত রবিবার উপজেলার ২০টি স্কুল পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ১২টি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সময়মতো উপস্থিত হন না- এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সরকারি সময়সূচি নির্ধারণ করা আছে। যেসব শিক্ষকরা সময়মতো স্কুলে উপস্থিত হননি তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিলে একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়া ক্লাস্টার মিটিংয়ে ৮৬টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য উপজেলার সব শিক্ষকের মাঝে শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে প্রশাসন।