মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী

সিলেট

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে মশার উপদ্রব বেড়েছে। অনেক দিন ধরে শুধু সিলেট নয়, সারা দেশেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসে আতঙ্কিত ছিল গোটা দেশ। এডিসের উপদ্রব কমতে না কমতে সিলেটে শুরু হয়েছে কিউলেক্স মশার রাজত্ব।

জানা যায়, কিউলেক্সের কামড়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের উদ্ভব ঘটে। অথচ সিলেট সিটি কর্পোরেশন এ মশার কবল থেকে নগরবাসীকে উদ্ধারে কোনো ভূমিকা পালন করছে না।

শীত মৌসুমের শুরুতেই বেশকিছু এলাকা পরিদর্শনের পর দেখা গেছে, সর্বত্রই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী।কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টানিয়ে মশার উপদ্রব থেকে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে মানুষ।

দিনের বেলায়ও বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে হচ্ছে মশারি টানিয়ে।এই যখন অবস্থা, তখন বিভিন্ন এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে মশক নিধনের আহ্বান জানানো হলেও কাউন্সিলর বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে সেসব কথার কোনো মূল্য থাকছে না।

সিসিক কর্তৃপক্ষ যদিও বলছে, তারা বছরে ৪ টি ধাপে পুরো নগরীতে মশক নির্ধন কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কটের কারণে মশার বিস্তার রোধে তাদের দুর্বলতার বিষয়টি স্বীকার করেছে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ২৭টি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জনবল নেই। নিয়মমাফিক কীটনাশক প্রয়োগ না করায় মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে একটি এলাকায় ১৫ দিন পর একবার করে স্প্রে এবং এর ১৫ দিন পর ফগার মেশিন ব্যবহার করতে হয়। আর এভাবে ৪ থেকে ৬ বার স্প্রে করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদী ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রয়োজন মাফিক জনবল না থাকায় সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। স্প্রে করার ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ফগিং করতে হচ্ছে। ফলে অভিযানের সুফল মিলছেনা।

সিসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য সিসিকের স্থায়ী কোন জনবল নেই। দৈনিক মজুরীতে লোক নিয়োগ করে চালানো হয় কার্যক্রম। নগরীর ১টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য দৈনিক মজুরী বাবত ৩৬ হাজার টাকা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলারগণের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মশক নিধন কার্যক্রম। ৪০০ টাকা রোজে প্রতি ওয়ার্ডে আড়াই থেকে ৩ মাসব্যাপী কার্যক্রমে ৯০ জনকে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। এভাবে এই কাজের জন্য বছরে সিসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে ব্যয় হয় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবে এর কোন সুফল পাচ্ছেনা নগরবাসী।

এদিকে, ব্যর্থতা স্বীকার করলেও মশার বৃদ্ধির জন্য নাগরিকের অবহেলাকে দায়ী করছেন তারা। গত অক্টোবর মাস থেকে নগরীতে মাইকিং করে বলা হয়েছে, বাসার সামনে কিংবা ড্রেনে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে এবং নিজ দায়িত্বে বাসা বাড়ী ও দোকান পাঠের আঙ্গিনা পরিস্কার করার জন্য। কিন্তু এতে নাগরিকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া মিলেনি। উল্টো বাসা বাড়ীর আশপাশ, ড্রেনে অবাধে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে মশার বংশবিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সাথে নগরীর অভ্যন্তরে কিছু টিলা রয়েছে। এসব টিলায় মশা বাসা বাঁধে। সেসব স্থানে সিসিকও অভিযান পরিচালনা করতে পারেনা। এছাড়া বাউন্ডারি করা খালি প্লটগুলোতেও নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তুলেছে কিউলেক্স মশা। চলতি মওসুমে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে সিসিক অনেকটা সফল হলেও কিউলেক্স মশা নিধনে ব্যর্থ হয়েছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: জাহিদুল ইসলাম বলেন, মশক নিধনে আমাদের অক্ষমতার কারণে মশার উৎপাত বেড়ে চলেছে। ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য স্থায়ী জনবল নেই। দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে বছরে ওয়ার্ড ভিত্তিক ৯০ জনকে নিয়োগ দিয়ে কাজ করানো হয়। সিসিকের পক্ষ থেকে মশক নিধনের জন্য ঔষুধ পত্র ও ফগিং মেশিন দিয়ে থাকি। স্প্রে’র কাজ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলারগণ মনিটরিং করে থাকেন। তাই সঠিক স্থানে সঠিক সময়ে স্প্রে ফগিং মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে কি না এর বাস্তবতা আমরা দেখতে পারিনা। তবে শীতকালে সাধারণত মশার উৎপাত কিছুটা বেড়ে থাকে। তাই এই সময়গুলাতে আমরা অভিযান জোরদার করে থাকি। শীঘ্রই আমরা মশক নিধন কার্যক্রমে বড়সড় অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছি। প্রত্যাশা করছি ২/৩ মাসের মধ্যে নগরবাসী মশানিধনের সুফল ভোগ করতে পারবেন।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, যে কোন কারণে যে কোন মওসুমে মশার বিস্তার বাড়লেও স্প্রে দিলে কমে যাওয়ার কথা। তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এর বিস্তার বেড়েছে। এক্ষেত্রে সিসিকের ব্যর্থতার পাশাপাশি মানুষের অসচেতনতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। নগরীর প্রতিটি এলাকায় ময়লা আবর্জনাবাহী গাড়ী থাকার পরও কিছু মানুষ ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলে মশার প্রজনন কেন্দ্র তৈরী করে দিচ্ছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন বর্ষা মৌসুমে মশা নিধন কার্যক্রমে যথেষ্ট ভূমিকা রাখলেও সাম্প্রতিক সময়ে এ কাজে ভাটা পড়েছে। সিটি করপোরেশনকে খাল, ডোবা পরিষ্কারের পাশাপাশি মশার লার্ভা ধ্বংসে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে মশার বিস্তার আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারী পর্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়াসিস ও ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *