মাংসের দোকানে ক্রেতা নেই, বেচাকেনাও অর্ধেক!

বাংলাদেশ

প্রতি বছর রমজানের দুই তিন দিন আগে থেকে রমজানের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মুরগি ও মাংসের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এবার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অধিকাংশ মুরগি ও মাংসের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় নেই। বেচাকেনাও অর্ধেকে নেমেছে। এতে করে দোকানিরা দোকানে বসে ক্রেতার অপেক্ষায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। মাংসের দোকানের পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেই দোকানিরা ক্রেতা ভেবে ডাকাডাকি শুরু করছেন!

শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বেশ একাধিক কাঁচাবাজার সরেজমিনে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

রাজধানীর মতিঝিল কলোনি কাঁচা বাজার, আরামবাগ কাঁচাবাজার এবং আইডিয়াল স্কুলসংলগ্ন প্রধান সড়কে বসা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, খাসির মাংসের কেজি ১১০০ টাকা, বয়লার মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা, দেশী মুরগি ৭০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, লেয়ার ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে বাজারে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। সরকারি চাকজীবীদের গত ৬/৭ বছর ধরে কোন পে স্কেল দেয়া হচ্ছে না। বিপরীতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। কোন কোন ক্ষেত্রে অনেকের বেতন কমছে। আবার ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ কিংবা তার আগে করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হযে পড়ছেন। বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ মাছ-মাংসের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

একদিকে আয় না বাড়া অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।

মতিঝিল কলোনি কাঁচাবাজারের খাসির মাংস বিক্রেতা ও আল্লাহর দান মাংস বিতানের মালিক রবিউল মিয়াজী বাবু বলেন, ‘গত ১৪/১৫ বছর ধরে এই বাজারে কেবল খাসির মাংস বিক্রি করছি। কিন্তু এই বছরের মতো এত কম বেচাকেনা কখনো হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর রমজানের আগের দিন ১০ থেকে ১২টি খাসি জবাই করে বিক্রি করি। দোকানেও চারপাঁচজন কর্মচারী মাংস বিক্রি করতে করতে হিমশিম খেত। কিন্তু এবার রমজানের আগের দিন মাত্র ২টি খাসি জবাই করে বিক্রি করেছি। আজ রমজানের প্রথমদিনও বেচাকেনা নেই বললেই চলে।’

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে বাজারে ক্রেতা নেই। আগে যিনি ৩/৪ কেজি মাংস কিনতেন তারা এখন ১/২ কেজি মাংসও কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন। আর যারা এক কেজি দুই কেজি খাসির মাংস কিনছেন তারা এখন কোনো মাংসই কিনছেন না।’

বাবু আরও বলেন, ‘আগে যে খাসি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনতাম, বর্তমানে সেটা ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে মাংসের দাম বেড়ে গেছে। গত বছর রমজানে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় খাসির মাংস বিক্রি করলেও্ বর্তমানে বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০০ টাকায়।’

এদিকে গরুর মাংস বিক্রেতা শরিফ বলেন, ‘প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কলিজাও একই দামে বিক্রি করছি। কিন্তু বাজারে ক্রেতা নেই। মানুষ মাংস কিনতে আসছে না।’

অন্যদিকে একই কথা বলেছেন মতিঝিল কলোনি কাঁচাবাজারের লাকসাম দেশি মুরগি বিতানের মালিক শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘বাজারে মুরগির ক্রেতা নেই। গত বছর রমজানের আগের দিন আড়াই লাখ টাকার মুরগি বিক্রি করেছিলাম। এবার বিক্রি করেছে ৭০ হাজার টাকা।’

তিনি বলেন, ‘দাম বেড়ে যাওয়া ‍মুরগির ক্রেতা কমে গেছে। ফলে আমাদের আয়ও কমে গেছে।

কারণ হিসাবে তিনি বলেন, দাম যতই বাড়ুক বা কমুক আমাদের কেজিতে ২০ টাকার বেশি লাভ করার সুযোগ নেই। ফলে বিক্রি কম হওয়ায় লাভও কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৯০ টাকা, বয়লার ২৬০ টাকা, লেয়ার ৩৬০ টাকা দেশি মুরগি ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’

এদিকে লাকসাম মুরগির দোকানে কথা হয় রিকশাচালক কামাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরু-খাসির মাংস কেনার কথাও তো ভাবতেও পারি না। তবে সোনালি ও বয়লার মুরগি মাঝে মাঝে কিনতাম। দাম বাড়ার ফলে ২ মাস ধরে কেবল বয়লার কিনতাম। এখন সেটাও কিনতে পারছি না।’

কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘এক কেজি বয়লার মুরগির দাম ২৬০ টাকা। মুরগি জবাই করে নাড়িভুরি ও পশম ফেলে দেওয়ার পর থাকে ৬০০ গ্রাম। এই ৬০০ গ্রাম মাংস ২৬০ টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য আমাদের আর নেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *