মানহীন খাবার দিয়ে অতিরিক্ত মূল্য রাখছে সিলেটের পানসী রেস্টুরেন্ট

সিলেট

ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র সিলেটে ঢল বাড়ছে পর্যটকদের। সিলেটমুখী পর্যটকদের এই ভীড়ের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পানসী রেস্টুরেন্ট। নগরীর জল্লারপাড় রোডস্থ এই রেস্টুরেন্ট পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি মূল্য নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

তাছাড়া, খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেছেন বিক্ষুব্ধরা। খাবারের বাড়তি বিল এবং মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও সংশ্লিষ্টদের জবাব সন্তোষজনক নয়-এমন অভিযোগও রয়েছে।

খাবার হোটেলগুলোর মধ্যে ভোজনরসিক মহলে সিলেটের পানসী রেস্টুরেন্ট অন্যতম। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আসা দর্শনার্থীরা সিলেট শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। তবে খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রে পর্যটকরা ছুটে যান নগরীর প্রসিদ্ধ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য একটু রেস্টুরেন্ট হল পানসী। ভোজনরসিকদের আগমনে জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।

প্রায় ১ যুগ ধরে চলা এই রেস্টুরেন্টটি প্রথম দিকে মানসম্মত খাবার প্রদান করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে নগরীতে বেড়াতে আসা লোকজনের কাছে এই রেস্টুরেন্টটি আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠে। কিন্তু বিগত ২ বছর ধরে খাবারে রঙ প্রয়োগ,মানহীন খাবার পরিবেশন, বাড়তিমূল্যে খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকবার জরিমানার মুখে পড়েন পানসী কর্তৃপক্ষ।

এতসব অভিযোগ ও জরিমানার পরেও ক্ষান্ত হননি তারা। এবার আরো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পানসীর বিরুদ্ধে।ঈদে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পকেট কাটার মিশনে নেমেছে রেস্টুরেন্টটি। খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ গুণ করা হয়েছে। মান নেমে এসেছে অর্ধেকের কোটায়।

বাড়তি মূল্য রাখার বিষয়টি মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রেস্টুরেন্ট পরিদর্শনকালে সত্যতা পাওয়া গেছে। রমজানের আগে গরুর মাংসের দাম ওই রেস্টুরেন্টে ১২০ টাকা ছিল। এখন সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৯০ টাকা। তাও পরিমাণে আগের চেয়ে কমে এসেছে সাইজ।সর্বসাকুল্যে ৫০ গ্রামেরও কম মাংস প্রদান করছে রেস্টুরেন্টটি। ডালের বাটিতে খুঁজে পাওয়া গেছে খুব কম পরিমাণ ডালের অস্তিত্ব। বোয়াল মাছের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত রাখছেন কর্তৃপক্ষ।

এতো বাড়তি দাম কেন জিজ্ঞেস করতেই একজন খাবার পরিবেশনকারী বলে উঠেন ‘দামে পোষাইলে খান,নাইলে চলে যান’। ভোক্তাদের অনেকে খাবার শেষে বিলের কাগজ চাইলেও দিচ্ছেনা রেস্টুরেন্টটি। বিলের কাগজ বিলের সাথেই রেখে দেয়া হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরে দেখা যায় ব্যাপক অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। সেই সাথে আছে স্টাফদের দুর্ব্যবহার।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ব্যাংকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ৩ মাস আগেও এখানে খেয়েছি। সেবার একা ছিলাম।এখন পরিবার নিয়ে এসে যা দেখলাম তাতে নিজের কাছেও লজ্জা লাগছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, খাবারের মাত্রাতিরিক্ত দাম, মানহীন খাবার, স্যাঁতসেতে খাবার টেবিল এসব দেখে খাবারের রুচিই নষ্ট হয়ে গেছে।

জানা গেছে,ঈদকে সামনে রেখে খাবারের দাম বৃদ্ধি এবং নিজেদের ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহকালীন সেখানে নিয়মিত খেতে আসা জাতীয় দৈনিক ভোরের ডাকের সিলেট জেলা প্রতিনিধি আব্দুল হান্নান ক্রেতাদের সাথে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা দেখে প্রতিবাদ জানান। রেস্টুরেন্টটির কর্তৃপক্ষকে ডেকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা দায়সারা জবাব দেন।

সাংবাদিক হান্নানও বলেন, আমি স্থানীয় সংবাদকর্মী এবং তাদের গ্রাহক হওয়া স্বত্ত্বেও আমার কাছ থেকে বোয়ালমাছ বাবদ ৪০০ টাকা আদায় করেছে। কারন জিজ্ঞাসা করলে জানায়, বোয়ালমাছ সাইজ অনুযায়ী একেক সময় একেক রেটে বিক্রি হয়। এই কৌশল অবলম্বন করে সাইজের দোহাই দিয়ে রেস্টুরেন্টটি পর্যটকদের কাছ থেকে বিল নিচ্ছে ইচ্ছেমতো। প্রতিবাদ করেও সুফল মিলছেনা।

এ বিষয়ে পানসী রেস্টুরেন্টের মালিকপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। সরাসরি বিলিং কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *