সবাইকে চমকে দিয়ে গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তামিম ইকবাল। তারকা এই ওপেনারের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক সবাই। এরপর তামিমকে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তামিম। তামিমকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরানোর পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও।
এই তারকার অবসর ইস্যু নিয়ে তাৎক্ষণিক আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই ইস্যু নিয়ে সেদিনই রাত ১০টায় রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে সভা ডাকে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ওয়ানডে অধিনায়ককে ফেরানোর চেষ্টা করবেন তারা। তবে তামিমকে যে কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ত্রাণকর্তা মাশরাফি হিসেবে হাজির হন।
তামিমের অবসর ঘোষণার পর তার সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে চান প্রধানমন্ত্রী। তবে জানা যায়, বোর্ডের মাধ্যমে তাকে পাওয়া না গেলে শেষমেশ মাশরাফির মাধ্যমে তামিমকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামিমকে ফেরানোর ঘটনায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফির গুরুত্ব আরও পরিষ্কার হলো। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকজুড়ে তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি করার জোর দাবিও উঠেছে। তামিমের ফেরার সিদ্ধান্তে স্বস্তি জানিয়েছেন লাখ লাখ ক্রিকেট ভক্ত। একই সঙ্গে অনেকেই মাশরাফিকে নিয়ে দাবি তুলতে দেখা যায়।
যদিও এখনই মাশরাফিকে বিসিবি সভাপতি করার সুযোগ নেই। কেননা এই পদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিধিবিধান রয়েছে, এজন্য কোনো ক্লাবের সভাপতি থাকতে হয় অথবা বোর্ড পরিচালক বা কাউন্সিলর হয়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করতে হয়। মাশরাফির তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তবুও ফেসবুকজুড়ে দাবি তুলে চলেছেন ভক্তরা।
সিনিয়র সাংবাদিক কামাল আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তামিম তারকা ক্রিকেটার, কিন্তু ক্ষমতার কাছে অসহায়। তার বিড়ম্বনা খালি চোখে ধরা পড়ার কথা না। নির্দেশিত হওয়ার পর অবসর প্রত্যাহার ছাড়া তার কোনো বিকল্প ছিল কি? তামিমের অবসরের ঘোষণায় এত আহা-উহু হলো, কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডকে রাহুমুক্ত করার দাবি কোনো সংবাদমাধ্যমে শোনা গেল না।…’
সাংবাদিক ও গবেষক মিঠুন মোস্তাফিজ শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মাশরাফি ও তামিমের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘মাশরাফিকে বিসিবি সভাপতি হিসেবে মানায়। এটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ।’
চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিক আকমল হোসেন একটি মিম শেয়ার করেছেন। তাতে পাপনকে রাগী বাবা, তামিমকে অভিমানী ছেলে ও মাশরাফিকে বুঝদার বড়ভাই আখ্যা দেওয়া হয়। সাংবাদিক আকমল লেখেন, ‘এই বুঝদার বড় ভাইকে বিসিবিতে পেলে খেলার চিত্রটা অন্যরকম হত।’
এদিকে ক্রিকম্যাক ফেসবুক গ্রুপে টপ কন্ট্রিবিউটর আমানুল হাসান ইশাতও একই দাবি তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তামিমের অবসর ইস্যুতে বোর্ড সভাপতি পাপনসহ পুরো বোর্ডকে বিলুপ্ত করে মাশরাফিকে বোর্ড প্রধান করে সবকিছু ঢেলে সাজানো উচিত। সমস্যা গভীর থেকে সমাধান না হলে দেশের ক্রিকেটের জন্য সেটা ভালো হবে না। তামিমের এভাবে প্রস্থান মোটেও ভালো কিছু নয়, আজকে হয়তোবা তামিম! অদূর ভবিষ্যতে সাকিব, লিটন, শান্তর বেলায় ও তেমন কিছু যে হবে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে।’
৫০ হাজারের বেশি সদস্যের গ্রুপটির ওই পোস্টে অনেকেই সহমত জানিয়েছেন। তবে লেখক রাসয়াত রহমান জিকো অবশ্য বলেছেন, ‘পাপনই ঠিক আছে এদের জন্য।’
সাংবাদিক এসএ পলাশ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অবসর ভেঙে মাঠে ফিরছেন তামিম! এবার দাবি, মাশরিফেকে বিসিবি সভাপতি করা হোক!’
অপর সাংবাদিক নাজমুল হোসেন অন্তর ফেসবুকে বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। অভিনন্দন তামিম ইকবাল। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনই সময় প্রিয় মাশরাফির হাতে বিসিবির নেতৃত্ব তুলে দেওয়া।’
মাশরাফিকে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মনে করা হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব পান মাশরাফি। কিন্তু ইনজুরির কারণে দল থেকে বাইরে চলে যান কয়েক বছরের জন্য। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে আবারও বাংলাদেশ ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব পান মাশরাফি। এরপর থেকেই পাল্টাতে থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের চিত্র। পরে ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানান। তবে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক অবসর নেননি।
শেয়ার করুন