আরেকটি মৌসুম, নতুন নামে আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। কিন্তু সিলেটের ভাগ্য এবার বদলাবে? কঠিন প্রশ্ন, উত্তরটা আপাতত সময়ের হাতে। তবে সিলেটের যে চেষ্টার কমতি নেই, তা বলাই বাহুল্য।
বিপিএলের সর্বশেষ তিন আসরে খেলেছে সিলেটের তিনটি ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি—সানরাইজার্স, থান্ডার, সিক্সারস। সর্বশেষ তিন আসরে তাদের সবচেয়ে ভালো ফল? টেবিলে নিচের থেকে দ্বিতীয় হওয়া, বাকি দুবার দলটি লিগ শেষ করেছিল টেবিলের তলানিতে থেকেই। এবার নাম বদলে দলটি সিলেট স্ট্রাইকার্স। নেতৃত্বে মাশরাফি বিন মুর্তজা। সিলেট যে বিপিএল-ভাগ্য বদলাতে চায়, সেটি তাই আলাদা করে না বললেও চলে।
ড্রাফটের আগে স্থানীয় হিসেবে সবার আগে মাশরাফিকেই দলে ভিড়িয়েছে সিলেট। জাতীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে খেলেছিলেন গত বছরের এপ্রিলে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। তবে বিপিএলের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি, এ মঞ্চও চেনেন ভালোভাবে। মাশরাফির সঙ্গে আছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যাওয়া মুশফিকুর রহিম, বিপিএলের শিরোপা এখনো জেতা হয়নি যাঁর। গতবার খুলনার হয়ে প্লে-অফ পর্যন্ত গেলেও সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়েছে মুশফিককে।
সরাসরি চুক্তিতে বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সিলেট হাত বাড়িয়েছে মূলত অলরাউন্ডারদের দিকে। অবশ্য বিদেশিদের কথা উঠলে আলাদা করে চোখ রাখতে হবে মোহাম্মদ হারিসের ওপরও। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ ধরনের পারফরম্যান্স দেখানো এ ব্যাটসম্যানকে অবশ্য পুরোটা সময় পাবে না সিলেট। পিএসএল শুরু হবে বলে সিলেট প্লে-অফ পর্যন্ত গেলে সেখানে পাওয়া যাবে না অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ আমিরকেও।
স্থানীয় ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সিলেট অভিজ্ঞ ও তারুণ্য—দুয়ের মিশেলের ওপরই ভরসা রেখেছে। মাশরাফি-মুশফিক ছাড়াও রুবেল হোসেন, নাজমুল হোসেনদের সঙ্গে আছেন আকবর আলী, তানজিম হাসানরা। এবার দলের ম্যানেজমেন্টেও সিলেট-সংশ্লিষ্টতা বাড়িয়েছে দলটি, প্রধান কোচ হিসেবে রাখা হয়েছে রাজিন সালেহকে।
রাজিন নিজেও অবশ্য তাকিয়ে দলের অভিজ্ঞ দুজনের ওপরই, ‘মাশরাফি তো সফল অধিনায়ক, তার অধিনায়কত্ব ও পারফরম্যান্স ততটাই আশা করব। মুশফিককে বিপিএলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মনে করি। আশা করি, ভালো করবে।’
শক্তি>>
অলরাউন্ডার আর অলরাউন্ডার!
থিসারা পেরেরা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে আরেক শ্রীলঙ্কান হিসেবে সিলেট নিয়েছে দুই হাতেই বোলিং করতে পারা অলরাউন্ডার কামিন্দু মেন্ডিসকে। সর্বশেষ লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে জাফনা কিংসের হয়ে ১৫০-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে কার্যকরী কিছু ইনিংস খেলেছেন পেরেরা, মেন্ডিসের সময়টা দারুণ কেটেছে ব্যাটিংয়ে। জিম্বাবুয়ের লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল, সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চমক দেখানো ডাচ ব্যাটিং অলরাউন্ডার কলিন অ্যাকারম্যানও আছেন। পরে ড্রাফট থেকে তারা দলে নেয় আফগানিস্তানের গুলবদিন নাইব ও নটিংহামশায়ারের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান টম মুরসকে। মুরস ইংল্যান্ডের সাবেক কোচ পিটার মুরসের ছেলে। খেলেছেন সর্বশেষ দ্য হান্ড্রেডেও। আছেন পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিমও।
এমনিতে ব্যাটসম্যান হলেও অফ স্পিনে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাও চমক দেখাতে পারেন। রায়ান বার্লের লেগ স্পিন যেমন অপশন হিসেবে থাকবে মাশরাফির হাতে, শেষের দিকে তাঁর হিটিংয়ের সামর্থ্যও কাজে লাগবে। গুলবদিন নাইব, কলিন অ্যাকারম্যান, তাইবুর রহমানও আছেন অলরাউন্ডার হিসেবে। যদিও নাইব, বার্ল ও হারিসকে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই পাবে না সিলেট। পেসে মাশরাফি-আমির-তরুণ রাজা বা তানজিমের সঙ্গে অলরাউন্ডাররাও ভরসা দিতে পারে সিলেটকে।
দুর্বলতা>>
টপ অর্ডার আর স্পিনের কী হবে?
নাজমুল হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান—আপাতত টপ অর্ডারে সিলেটের ভরসা। বিপিএলে জাকির অবশ্য এখন পর্যন্ত ওপেন করেছেন মাত্র ৫ ম্যাচে। তবে তিনি বা বাকি দুজন—কেউই সে অর্থে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান নন। টি-টোয়েন্টিতে কারও স্ট্রাইক রেটই ১২০-এর ওপর নয়। ‘স্বাগতিক’ দল হিসেবে সিলেটে চার দিনের মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলতে হবে তাঁদের। ওপেনিংয়ে তাই কিছুটা ‘আউট অব দ্য বক্স’ চিন্তা করতে হতে পারে সিলেটকে। স্পিনেও সে অর্থে বড় নাম নেই তাদের। নাবিল সামাদ, নাজমুল ইসলামরা অবশ্য পরীক্ষিত।
চোখ থাকবে যাঁদের ওপর>>
জাতীয় দলও ভরসা রাখছে তাঁর ওপরই। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুটি ফিফটি করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সিলেটেও টপ অর্ডারে অন্যতম ভরসা এই বাঁহাতি ওপেনার। বিপিএলে সেঞ্চুরি আছে। তবে গত মৌসুমটা বরিশালের হয়ে খুব একটা সুবিধার ছিল না তাঁর। ১০০-এর নিচে স্ট্রাইক রেটে ১০ ইনিংসে করেছিলেন ১৮৮ রান। টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান নাজমুলের ওপর আলাদা করে চোখ থাকারই কথা বিপিএলের এ আসরে, অন্তত জাতীয় দলের পরিপ্রেক্ষিতে হলেও।
আর মাশরাফি-মুশফিকরা যে ফোকাসেই থাকবেন, সেটা অনুমেয়ই।
শেয়ার করুন