অর্থ আত্মসাত ও জালিয়াতির অভিযোগে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ’র বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন-পিবিআই সিলেট। তার দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানীর পরিচালক পদ বাতিল করে বোর্ড মিটিংয়ে রেজুলেশনও করা হয়েছে। এদিকে আবার ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) হিসাবে কোম্পানীতে ফারুক আহমদ মিসবাহ’র অবস্থান নিয়ে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত একটি মামলাও শুনানীর অপেক্ষায়। তিনি উচ্চ আদালতে মামলার বিষয়টি স্বীকার করলেও পরিচালক পদ বাতিল ও অর্থ আত্মসাত এবং জালিয়াতির অভিযোগ সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন সিলেট প্রতিদিনকে।
জানা গেছে, সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানীর এমডি ফারুক আহমদ মিসবাহ’র বিরুদ্ধে কোম্পানীর ১০ কোটি টাকার বেশী অর্থ আত্মসাত ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে নিজের পদ ধরে রাখতে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগে এই কোম্পানীরই অন্যতম পরিচালক এমএ সামাদ গত ১ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্তি চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন (কোতোয়ালি সিআর মামলা নং ৯৫৮/২০২৩)।
মামলার এজাহারে তিনি ফারুক আহমদ মিসবাহ’কে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার অভিযোগে লিখেছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যথা সময়ে কোম্পানীর বার্ষিক সাধারণ সভা আহ্বান করে পরিচালকদের আয়-ব্যয়ের হিসাব না দিয়ে ও ডিভিডেন্ট বন্টন না করে ১০ কোটি টাকার বেশী নিজেই আত্মসাত করেছেন। আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে এবং এজিএম আহ্বানের জন্য বারবার অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানীর অন্তত ৬ জন পরিচালক ২০২০ সালে তাকে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছিলেন।
সামাদের অভিযোগ, ২০২০ সালের ২২ জুলাই মিসবাহ দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানীর অফিসে বসে কোম্পানীর পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দুলাল, ড. এনামুল হক সরদার, আজাদ উদ্দিন, মো. আলকাছ আলী, মো. আকরাম উদ্দিন ও এমএ সামাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এক সঙ্গে ১০ বৎসরের বোর্ড সভার রেজুলেশন প্রস্তুত করে জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর রেজিস্ট্রার বরাবর দাখিল করেছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিজের বৈধতা প্রমাণে তিনি ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ করা পরিচালক মামুনুর রশীদকে ২০১৭ সালের ২৮ আগস্টের বোর্ড সভা ও ২০২০ সালের ৩০ মার্চ বার্ষিক সাধারণ সভার প্রস্ততকৃত রেজুলেশনে উপস্থিত দেখিয়ে তার জাল স্বাক্ষর দিয়েছেন। এছাড়া ওই তারিখে কর্মস্থল যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দু’জন পরিচালকসহ অপর আরও দু’জন পরিচালকের স্ক্যান করা স্বাক্ষর দিয়ে তাদের উপস্থিত দেখানো হয়েছে। অভিযোগ আরও আছে। চেয়ারম্যান ছিলেন না, এমন পরিচালককে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সভার সভাপতি হিসাবে উল্লেখ করে স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনাও তিনি ঘটিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেছেন আব্দুস সামাদ। মামলায় ফারুক আহমদ মিসবাহ’র কুকর্মের সহযোগী হিসাবে আসামি করা হয়েছে সিলেট মহানগরীর সুবিদবাজার লন্ডনী রোডের মৃত নজিব আলী পীরের ছেলে এসএম ইকবাল হোসেন পীরকে।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিাবিআই সিলেটের উপপরিদর্শক এসআই ঝলক। তিনি জানান, ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রগুলো দেখা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।
মিসবাহ’র এসব অনিয়ম, অর্থ আত্মসাত ও অব্যবস্থাপনার প্রতিকার চেয়ে দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানীর পরিচালক আব্দুস সামাদ ও সিরাজুল ইসলাম দুলাল উচ্চ আদালতে ২০২০ সালে পৃথক দুটি মামলা (নং ১৭৭/২০২০ ও ১৭৮/২০২০) দায়ের করলে ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি এক আদেশে আদালত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ময়নুল ইসলামকে এ কোম্পানীর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। এখনো তিনিই চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২৬ আগস্ট তারই সভাপতিত্বে কোম্পানীর বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে কোম্পানী থেকে ঋণ নেয়ায় আরও কয়েকজনের সাথে ফারুক আহমদ মিসবাহ’র পরিচালক পদ কোম্পানী আইন ১৯৯৪ এর ৭৮ (৭) ১ ধারায় বাতিল বলে রেজুলেশন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীর অন্যতম পরিচালক আব্দুস সামাদ। তবে নতুন প্রধান নির্বাহী বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিয়োগে পরিচালক আব্দুস সামাদ ও সিরাজুল ইসলাম দুলালের একটি আবেদন এখনো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এ ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় এখন সিলেটের এই কোম্পানী।
এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক আহমদ মিসবাহ সিলেট প্রতিদিনকে বলেন, অর্থ আত্মসাত প্রতারণা বা জালিয়াতির মামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। এখন জানলাম। খোঁজ-খবর নিবো।
তার পরিচালক পদ বাতিল সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা কয়েকটি প্রশ্ন করেন। কে বাতিল করেছে? কবে বাতিল করেছে? কিভাবে বাতিল করেছে- ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরে তিনি বলেন, আমি এখনো ম্যান অ্যান্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছি। কোম্পানীর অফিসে বসেই আপনার সঙ্গে কথা বলছি। পরিচালক না হলে এখানে অফিস করতাম কিভাবে? কোম্পানীর দায়িত্বইবা পালন করতাম কিভাবে?
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি উচ্চ আদালতের এখতিয়ারে।
মামলার বাদি ও দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানীর অন্যতম পরিচালক আব্দুস সামাদ এ ব্যাপারে বলেন, ফারুক আহমদ মিসবাহ’র পরিচালক পদ কোম্পানী আইনে বাতিল করা হয়েছে। গত বোর্ড মিটিংয়ে এ ব্যাপারে রেজুলেশন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালনের নামে কোম্পানীর পরিচালকদের স্বার্থহানীর লক্ষ্যে কাজ করছেন। বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র তৈরি করছেন, ডকুমেন্ট তৈরি করছেন। এ ব্যাপারে আমি কোতোয়ালি থানায় সম্প্রতি একটি জিডিও দায়ের করেছি।
শেয়ার করুন