মুফতি মুহিব্বুল হকের জানাজায় লাখো মুসল্লির ঢল

সিলেট

লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে সিলেটের প্রবীণ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হকের (গাছবাড়ি) জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জানাযা শেষে হযরত শাহজালাল রহ. মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুর আড়াইটায় সিলেটের ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন তার বড় ছেলে ও দরগাহ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা এনামুল হক জুনাইদ।

মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ির জানাজায় অংশ নিতে বুধবার রাত থেকেই মুসল্লিরা মাদরাসা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন। শাহী ঈদগাহ ময়দানে লাশ নিয়ে যাওয়ার আগেই পুরো ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এসময় আশেপাশের সড়কও কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

মুফতি মুহিব্বুল হক ঐতিহ্যবাহী ‘জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ’ মাদরাসার মুহতামিম ও বাংলাদেশ উলামা পরিষদের সভাপতি, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি বুধবার (১৭ মে) মাগরিবের নামাজের পর দরগাহ মাদরাসায় নিজ বিশ্রামকক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে মুফতি মুহিব্বুল হকের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, চার মেয়ে ও ছাত্র-শিক্ষক-মুরিদানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বৃহস্পতিবার(১৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের দেখার জন্য তার লাশ দরগাহ মাদরাসায় নেয়া হয়। পরে দুপুর ১২ টায় শাহী ঈদগাহে নেয়া হয় তাকে।

মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি ১৯৪৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের ফখরোচটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইসহাক রহ.-ও একজন বরেণ্য আলেম ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন।

মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জ দরগাহপুর মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগার শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হন। তখন থেকে প্রায় ৫১ বছর ধরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ির জানাজা পূর্ব সমাবেশে মরহুমের জীবনী সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন আযাদ দ্বীনি এদারা ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহুদ্দিন সিরাজ।

আরও বক্তব্য রাখেন সিলেট এদারা বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল বছির, দরগাহ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, দরগাহপুর মাদরাসার মুহতামিম আল্লাামা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী, কানাইঘাট মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরী, হরিপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা হিলাল আহমদ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা অলিউর রহমান, কাজিরবাজার মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আহমদ আলী চিল্লা।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন. সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জামেয়া রেঙ্গার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, জামেয়া দারুল কোরআন সিলেটের প্রিন্সিপাল সাবেক এমপি শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা মুখলিছুর রহমান রাজাগঞ্জী, ধনুকান্দি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, মরহুমের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা জাবেদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *