মৃত্যুকূপের নাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

সিলেট

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিনে দিনে মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে।একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী সাধারণ ও চালকরা।প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এই সড়কে।সড়কে চলাচল নিরাপদ করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন চললেও মৃত্যু বন্ধ করা যায়নি।

পুলিশ বলছে, ছাদে ভ্রমণ, বাঁক ও রোড সাইন আপডেট না থাকায় ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।

গত ৭ জুন বুধবার সিলেটে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গতকাল সোমবার(১২জুন) ওসমানীনগরের নিজ কুরুয়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে পেছন দিক দিয়ে আরেকটি ট্রাক ধাক্কা দেয়।এতে ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হন।এছাড়াও চলতি বছরেই এই সড়কে আরও বেশ কয়েকটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।

এসব দুর্ঘটনায় কেউ হারাচ্ছেন বাবা-মা, কেউবা হারাচ্ছেন স্বামী কিংবা সন্তান।আর আহত হয়ে পঙ্গুতবরণ করে বিছানায় কাতরাচ্ছেন কেউ কেউ।

সম্প্রতি সিলেটে দুর্ঘটনার পরপরই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে গাড়ির ছাদে ভ্রমণ, বাঁক ও রোড সাইন আপডেট না থাকাকে দায়ী করে হাইওয়ে পুলিশ।

গত বুধবার সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণশ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছালে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

১২জুন সোমবার ভোর ৫টার দিকে সিলেটগামী একটি ট্রাক নিজ কুরুয়া নামক স্থানে আসার পর ট্রায়ার পাংচার হলে চালক ও সহকারী মিলে চাকা পরিবর্তন করছিলেন। একই দিকে সিলেট গামী আরেকটি ট্রাক এসে পেছন থেকে তাদের ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের চালক, চালকের সহকারীসহ তিন জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়।

এবিষয়ে সিলেট হাইওয়ে পুলিশের এসপি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিষিদ্ধ থাকলেও সিলেটের অনেক স্থানে গাড়ির ছাদে কিংবা ভ্যানে যাত্রী বহন করা হয়। হাইওয়েতে এ ধরনের যাত্রী পরিবহন কোনোভাবে অনুমোদন করা হয় না। ঈদে বা কোনো উৎসবে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে।’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট থেকে শেরপুর পর্যন্ত  অংশে ১৮টি বাঁক রয়েছে। এ বাঁকও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দুই বছর আগে রোড সাইন স্থাপন করা হয়েছে। যেগুলো পরে আর আপডেট করা হয়নি। এসব বিষয়কেও দুর্ঘটনা সংঘটনের ক্ষেত্রে দায়ী মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ।

১৫জনের দুর্ঘটনায় কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তারা অধিকাংশই গরিব। তাদের এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহনে গদাগদি করে বহন করা আইনসঙ্গত নয়। এর দায় তাদের শ্রমিক হিসেবে যারা হায়ার করছিল তাদেরও।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিলেটের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলামও নাগরিকদের অসচেতনাকে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করলেন।

তিনি বলেন, ‘অসচেতনতা সিলেট অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ। গাড়ির ছাদে যাত্রীবহন, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো, অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।এছাড়া রাস্তার ব্যবস্থাপনা ও উড়াল সেতু ব্যবহারে অনীহার কারণেও অহরহ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) মো. মাসুদ রানা জানান, বুধবারের দুর্ঘটনার ঘটনায় পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে যাত্রী পরিবহন বন্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া নিষিদ্ধ পরিবহন যেন রাস্তায় নামতে না পারে সেজন্য ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *