মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে পুকুর দখলের অভিযোগ

সিলেট

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে নগরের হিন্দু আলী পুকুর দখলের অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় ভুমিখেকোদের সাথে নিয়ে পুকুরটি দখল করতে সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ব্যবহার করছেন তিনি। এছাড়া উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ‘জনগণের পুকুর’ দাবি করে এটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন আরিফ।

বুধবার (১৭ আগস্ট) বেলা আড়াইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন সৈয়দানী বাগ (সৈয়দ বাড়ি) এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সৈয়দ খালেদ হোসেন মাহতাব। হিন্দু আলী পুকুর সৈয়দ খালেদের মৌরসি সম্পত্তির অংশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সৈয়দ খালেদ হোসেন মাহতাব বলেন, হিন্দু আলী পুকুর তাঁদের মৌরসি সম্পত্তির অংশ। বংশ পরম্পরায় পুকুরটি ভোগ দখল ও মৎস্য চাষ করে আসছেন তাঁরা। গত ৯ আগস্ট সকালে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হিন্দু আলী পুকুরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে সম্পত্তির মালিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে চাইলে সিসিকের পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার রশিদ বলেন, মেয়রের নির্দেশে পরিষ্কার পচ্ছিন্নতার কাজ করা হচ্ছে। এসময় পুকুরটি পরিচ্ছন্নতার কাজে আসা লোকদের সঙ্গে কতিপয় কয়েকজন ব্যক্তি এসে গালিগালাজ শুরু করেন। তাঁরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করলে মালিকগণ চলে যান। পরে পুলিশ মোতায়েন করে পুকুরে কাজ অব্যাহত রাখেন মেয়র আরিফ।

সৈয়দ খালেদ হোসেন মাহতাব বলেন, উক্ত হিন্দু আলী পুকুরটি আমাদের মৌরসি সম্পত্তি। এটা জনসাধারণের কোনো পুকুর নয়। পুকুরের অন্যতম রেকর্ডিং মালিক মোছা. আছক বানুর কন্যা মোছা. আমিনা খাতুনদের কাছ থেকে সৈয়দ আজিজুল হোসেনরা ক্রয় করেন। আমিনা খাতুন হলেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মা। ক্রয় সূত্রে সৈয়দানীবাগ হিন্দু আলী পুকুরটি পূর্বসূরিদের আমল থেকে ‘সৈয়দ মৎস্য খামার’ হিসেবে মাছ চাষ করে আসছিলেন আজিজুল হোসেনসহ ক্রয়কারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪-৭৫ সালে পুকুরটি সংস্কার করা হয়। পরবর্তীতে সৈয়দ নুরুল হোসেনের উত্তরাধিকারী সৈয়দ নাহিদ রহমান সাব্বির এবং সৈয়দ খাদিম হোসেনের উত্তরাধিকারী সৈয়দ তাজিদুল হোসেন বাবুল পুকুরটি বংশ পরম্পরায় ভোগ দখল ও মৎস্য চাষ করে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ খালেদ হোসেন মাহতাব আরও বলেন, ২০০৮ সালে পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে কবুলিয়তি হিসেবে বসবাসকারী পিয়ারা, দিলাল, দুলাল, রিফাত, জয়নালসহ কতিপয় বহিরাগতরা পুকুর থেকে মাছ চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় জিডি দায়ের করা হয়। এর জেরে তাঁরা পুকুরটিকে ‘জনগণের পুকুর’ দাবি করে সৈয়দ মৎস্য খামারের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জেরে সৈয়দ আজিজুল হোসেনকে তারা রক্তাক্ত জখম করলে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে কবুলিয়তিরা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মালিক পক্ষের জবাব দাখিলের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ খালেদ হোসেন বলেন, সিসিক মেয়র কবুলিয়তি লোকজনের যোগসাজশে পুকুরটি দখলের চেষ্ঠা করছেন। উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা জারি থাকা স্বত্বেও তিনি আদেশ অমান্য করে জোরপূর্বক পুকুর দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। আইনগত ভাবে মৌরসি সম্পত্তির ওপর অন্য কারো হস্তক্ষেপ বেআইনি। সরকারও প্রয়োজনে ভূমি নিতে চাইলে তিনগুণ মূল্য দিয়ে অধিগ্রহণ করে নিতে হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সৈয়দ বখতিয়ার হোসেন, সৈয়দ আফজাল হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ খালেদ হোসেন, সৈয়দ রাহাদ হোসেন, সৈয়দ মাহিদ রহমান সাব্বির, সৈয়দ আশরাফ হোসেন, সৈয়দ আতাউর হোসেন সাজুল, সৈয়দ ফজিলত হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মো. ফারুক আহমদ, মহনুর রহমান (মখই মিয়া), তুলা খা, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল্লা আল মামুন, মো. কামাল আহমদ, সৈয়দা ফাহমিদা হোসেন, সৈয়দ তারেক হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দা হেলেন বেগম, মো. হাবিবুর রহমান (হাসাদ), মাহমুদ ইয়াসিন, মতিন আহমদ, মো. হোসেন, আব্দুল আহাদ, শিমুল আহমদ, রুমেল খান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *